
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মার্চ মাসের শেষে আচমকা লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল গোটা দেশজুড়ে। বহু মানুষ নানা রকম ভাবে বিপদে পড়েছিল সব স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু পেটের টানে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে মজুর-শ্রমিকের কাজ করা অভিবাসী মানুষগুলির সমস্যা যেন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তাঁদের অন্য রাজ্যে থাকার বা নিজের রাজ্যে ফেরার কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায়, দিনের পর দিন মাইলের পর মাইল হেঁটে এবং আরও নানা উপায়ে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। দিনের পর দিন এসেছে তাঁদের মৃত্যুর খবর, তাঁদের দগদগে পায়ের ছবি, তাঁদের যন্ত্রণা। তাঁদের অসহায়তা স্পর্শ করে গেছে অনেকেই।
কিন্তু এবার এক উলটপুরাণ। কাজ ছেড়ে রাতারাতি প্রবল কষ্ট করে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন য়ে অভিবাসী শ্রমিকরা, তাঁরাই এবার ফের নিজের রাজ্য থেকে কাজের জায়গায় ফিরছেন, তাও আবার বিমানে করে, সসম্মানে!
বিহারের সমস্তিপুরের ২০ জন শ্রমিকের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে সম্প্রতি। দিল্লিতে এক কৃষক-ব্যবসায়ী পাপ্পন সিংয়ের ফার্মে মজুর হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা। মার্চের লকডাউনে দেশের নানা প্রান্তের মতোই দিল্লিতে আটকে পড়েন ওই শ্রমিকরা। কোনও ভাবেই ফেরা হয় না ঘরে। শেষে মে মাসে ঘরে ফেরেন তাঁরা। সেই দু’মাস তাঁদের থাকা খাওয়া এবং বিমানে করে ফেরার ব্যবস্থা অবশ্য করেছিলেন পাপ্পন সিং নিজেই।
পাপ্পন সিংয়ের মাশরুমের ফার্ম আছে। অগাস্ট থেকে এপ্রিল সে চাষের উপযুক্ত সময়। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জমি তৈরির কাজ। তাই নিজের উদ্যোগেই তাঁর ফার্মের সেই মজুরদের ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেন পাপ্পন। এদিকে মাস দুয়েকের চেষ্টাতেও ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা না হওয়ায়, সে কথা জানাতে, পাপ্পন সিং নিজেই ২০ জনের বিমানের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাতেই ফের কাজে ফিরবেন ওই ২০ জন।
জানা গেছে, টিকিটের দাম পড়েছে এক লক্ষ টাকারও বেশি। মজুররা বলছেন, মালিক সবসময়ই তাঁদের সুবিধা অসুবিধা দেখেন। যখ লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা, তখনও এই পাপ্পন সিংই সব ব্যবস্থা করেছিলেন। বিমানের টিকিট কেটে বাড়িও ফিরিয়েছিলেন তিনি। এবার কাজের সময় হয়েছে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করলে মাশরুম চাষের সময় পেরিয়ে যাবে। তাই দ্রুত যাওয়ার জন্য প্লেনের টিকিট কেটে পাঠিয়েছেন মালিক।
পাপ্পন সিংয়ের অবশ্য এ বিষয়ে তেমন হেলদোল নেই। তাঁর বক্তব্য, “ওই মজুরদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ২০-২৫ বছরের। আজ আমার ব্যবসা যতটা, তাতে ওঁদেরই অবদান আছে। আমার পরিবারকে তো বাঁচিয়ে রেখেছেন ওঁরাই! তাই ওঁদের জন্য ভাবব না তো কার জন্যে ভাবব! ওঁরাই তো সব!”
সারা দেশে যেখানে প্রায় কেউ দায়িত্ব নেননি মজুর-শ্রমিকদের, লকডাউন হয়ে যেতেই সব বন্ধ করে দিয়ে বিপদে ফেলেছেন তাঁদের, সরকার পর্যন্ত ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়নি, সেখানে সেই মানুষগুলোকেই নিজের অন্নদাতা বলে স্বীকার করেন দিল্লির এই কৃষক-ব্যবসায়ী। শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের এক নতুন চেহারা যেন উন্মোচিত হয় এই ঘটনায়।