
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি : সোনার লোভে ভাড়াটে খুনি দিয়ে জলপাইগুড়ির বিমা কর্মী গোপা শর্মাকে খুন করিয়েছে তাঁর পাতানো ভাগ্নে। অভিযুক্তদের জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বলে ঘটনার ১৩ দিন পরে আজ শুক্রবার দাবি করল জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।
গত ১৩ অক্টোবর জলপাইগুড়ির পুরাতন পান্ডাপাড়ার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বছর ৪৭ এর গোপা শর্মার দেহ। তাঁর স্বামী ছিলেন জীবনবিমার কর্মী। কর্তব্যরত অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর পর চাকরি পান গোপা। কিছুদিন আগে মৃত্যু হয় তাঁদের একমাত্র মেয়ের। ওই মহিলার দেহ উদ্ধারের পর প্রতিবেশীরা তাঁর আচার আচরণ নিয়ে নানা অভিযোগ করেছিলেন। তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান, এই খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পারেন সনৎ মিত্র নামে একজনের অবাধ যাতায়াত ছিল গোপার বাড়ি। সে গোপাকে মামি বলে ডাকতো। তার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। দিন সাতেক পরে আলিপুরদুয়ার থেকে গ্রেফতার করা হয় সনৎকে। তার সঙ্গেই পাকড়াও করা হয় তার সঙ্গী শঙ্কর দাসকে। শঙ্কর ভাড়াটে খুনি বলে পুলিশের দাবি। তাদের জেরা করেই নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় পাপাই রায় ও কৃষ্ণ দাস নামে আরও দুই যুবককে। এরা প্রত্যেকেই শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাদের একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করেই খুনের মোটিফ সম্পর্কে একরকম নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ সুপার জানান, বছর ৩২ এর যুবক সনৎ এর সোনার কারবার রয়েছে। কোনওভাবে সে জানতে পারে প্রচুর সোনা রয়েছে গোপার। সেই সোনা হাতাতেই গোপাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সনৎ জানায়, এই কাজের দায়িত্ব সে দিয়েছিল শঙ্করকে। তার সঙ্গে পরিকল্পনা করেই ভাড়া করেছিল পাপাই ও কৃষ্ণকে।
পরিকল্পনা করে ১২ তারিখ রাতে শঙ্করকে নিয়ে মাংস কিনে গোপার বাড়িতে যায় সনৎ। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সেখানে পৌঁছায় পাপাই ও কৃষ্ণ। সনৎ, গোপাকে বলে বিশেষ কাজে জলপাইগুড়ি এসে আটকে পড়েছে তারা। রাতে ওই বাড়িতে তাদের থাকতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। রাতের খাওয়া দাওয়ার পর সনৎ ও শঙ্কর চলে গেলেও থেকে যায় পাপাই ও কৃষ্ণ। পুলিশ জানিয়েছে, কিছু একটা আন্দাজ করেই রাতে তাদের দোতলায় শুতে দিয়েছিলেন গোপা। এবং বাইরে থেকে তালা আটকে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না বুঝতে পেরে বেশি রাতে জল খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করে তারা। প্রতিবেশীরা যাতে কিছু টের না পায়, তাই তড়িঘড়ি উপরে যান গোপা। আর তখনই দুই দুষ্কৃতী শ্বাসরোধ করে খুন করে তাকে। পরে ঘর থেকে সাড়ে তিন ভরি সোনার গয়না ও ১০ হাজার টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয়।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, যে সোনার জন্য খুনের ছক তার নাগাল পায়নি দুষ্কৃতীরা। কারণ গোপার গয়নার পুরোটাই রয়েছে ব্যাঙ্কের লকারে।