
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফের সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবী। মৃত মৎস্যজীবীর নাম বাদল বৈরাগী, বয়স মাত্র ৩২। রবিবার দুপুরে সুন্দরবনের সুধন্যখালি জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, অভাবের তাড়নায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাদল বৈরাগী সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু করোনার জেরে লকডাউন চলায় গত কয়েক মাস ধরে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ ছিল। ফলে সংসার চালানোর জন্য বিপাকে পড়ে যান বাদল। গোসাবা ব্লকের বালি বিজয়নগর কলোনি পাড়ার নদীর তীরবর্তী কুঁড়ে ঘরে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন বাদল। বিনা রোজগারে সংসারে অন্ন সংস্থান মুশকিল হয়ে পড়ে।
অবস্থা এমনই হয়, যে শেষ পর্যন্ত সন্তানদের ফেলে রেখেই অন্যত্র চলে যায় তাঁর স্ত্রী। দুই মেয়ে ও এক ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করছে। শেষমেশ কুঁড়ে ঘরে তিন সন্তানকে রেখে উপার্জনের তাগিদে তিন সঙ্গীকে নিয়ে সুন্দরবন জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
এর পরে রবিবার সকালে সুধন্যখালির গভীর জঙ্গলের খাঁড়িতে মাছ ধরার সময়ে দুপুরে হঠাৎই বাদলের উপর আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি বাঘ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও বাদলকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাদলকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায় বাঘ। এমনকি দেহটিকেও উদ্ধার করতে পারেননি সঙ্গী-সাথীরা।
এর পরে নৌকায় থাকা অন্যান্য মৎস্যজীবীরা ফিরে এসে বিদ্যা রেঞ্জ অফিসে ঘটনাটি জানান। সেখান থেকে একটা অনুসন্ধানকারী দল পাঠানো হয় বন দফতরের তরফে। তবে এখনও পর্যন্ত দেহটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার কোনও অনুমতিপত্র ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর।
সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির ক্যানিং মহকুমার সভাপতি শম্ভু সাহা বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সুন্দরবন জঙ্গলে প্রতিনিয়ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দরিদ্র মৎস্যজীবীরা জীবিকার তাগিদে জীবন বিপন্ন করে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে না গিয়ে যাতে অন্য জীবিকার সংস্থান করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
সুন্দরবন এলাকায় ব্যাঘ্র-বিধবাদের নিয়ে কাজ করা শিবগঞ্জ চম্পা মহিলা সোসাইটির কর্ণধার তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী শিক্ষক অমল নায়েক বলেন “সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলেছে।স্বামী হারিয়ে বিধবা হচ্ছেন অসংখ্য মায়েরা। সুন্দরবনে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য সরকার অবিলম্বে বিকল্প আয়ের সংস্থান না করলে পরিস্থিতি বদলাবে না।”