
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে অর্ণব গোস্বামী মামলার। সোমবার বম্বে হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পরে দায়রা আদালতে ফের আবেদন করেন তিনি। পাশাপাশি বম্বে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও গেছেন রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন-চিফ। আজ বুধবার, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভেকেশন বেঞ্চ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এই মামলার শুনানি শুনবেন।
এর মধ্যেই আবার অর্ণব গোস্বামী দাবি করেছেন, আলিবাগের জেলর তাঁকে হেনস্থা করেছেন। পাশাপাশি অর্ণবের স্ত্রী সাম্যব্রতা রায় গোস্বামীর বক্তব্য, “আমার স্বামী একজন সৎ সাংবাদিক। চার রাত জেলে কাটানোর পরে তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়েছে। তিনি বারবার বলছিলেন তাঁর জীবন বিপন্ন, কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
সোমবার বম্বে হাইকোর্টে শুনানি ছিল ২০১৮ সালে আর্কিটেক্ট অন্বয় নায়েক আত্মহত্যা মামলার। বস্তুত, শনিবার বিশেষ শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতি এসএস শিন্ডে এবং এমএস কার্নিক। সেই মামলার শুনানিতে সোমবার আবেদন খারিজ করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট। তাঁকে নিম্ন আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতিরা।
বম্বে হাইকোর্টের শুনানিতে অর্ণব এবং তাঁর আইনজীবীরা জানান, তাঁকে গ্রেফতার করা এবং তাঁর বিরুদ্ধে দু’বছরের পুরনো মামলা পুনরায় শুরু করা, দুটোই বেআইনি। হাইকোর্টের শুনানির আগেই নিম্ন আদালতে অর্ণবের জামিনের আবেদন করেন রিপাবলিক টিভি কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারের মধ্যে এই বিষয়ে নিম্ন আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই অর্ণব হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন।
যদিও ৪৭ বছরের অর্ণবের জামিনের সিদ্ধান্ত যে কেবল নিম্ন আদালতের হাতেই আছে, সে কথা সোমবার স্পষ্ট করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট। বিচারপতিদের মতে, অভিযুক্তের মতোই অভিযোগকারীর অধিকারও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। তাই তদন্ত বন্ধ করার যে আবেদনও অর্ণব জানিয়েছিলেন, সেটাও খারিজ করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট।
২০১৮ সালে আর্কিটেক্ট অন্বয় নায়েকের আত্মহত্যা মামলায় ৪ নভেম্বর মুম্বইয়ের ওরলির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অর্ণবকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। প্রথমে আলিবাগের মিউনিসিপ্যাল স্কুলে বন্দিদের জন্য তৈরি একটি কোয়ারান্টিন সেন্টারে রাখা হয়েছিল অর্ণবকে।
সেখানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন অর্ণব, সক্রিয় ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এই বিষয়টি তদন্তকারীদের নজরে আসতেই রবিবার অর্ণবকে তালোজা জেলে পাঠানো হয়।
পুলিশ অবশ্য প্রথম থেকেই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। কিন্তু আলিবাগ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সুনয়না পিঙ্গলে তাঁর অর্ডারে জানান, রায়গড় পুলিশ সঠিক কারণ দেখাতে পারেনি, কেন তারা অর্ণবকে পুলিশ হেফাজতে চাইছে। এমনকি অর্ণব গোস্বামীর গ্রেফতারিও বেআইনি বলেই মনে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কারণ ২০১৮ সালে আর্কিটেক্ট অন্বয় নায়েক ও তাঁর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে অর্ণব গোস্বামীর জড়িত থাকার সপক্ষে কোনও শক্তপোক্ত প্রমাণ এখনও মেলেনি। নতুন কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ঠিক কী কারণে দুবছর পরে এই মামলায় পুলিশ ফের সক্রিয় হল, তাও স্পষ্ট নয়।
রায়গড় পুলিশ আদালতে জানায়, ২০১৮ সালে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর ভিত্তিতে তারা অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত এগোনোর জন্য অর্ণবকে তাদের জেরা করা দরকার। সে জন্যই পুলিশি হেফাজত চেয়েছিল তারা। অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতে জানান, ২০১৮ সালে যে এফআইআর দায়ের হয়, তা তথ্যপ্রমাণের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু আত্মঘাতী অন্বয় নায়েকের স্ত্রী অক্ষতা নায়েক ও মেয়ে আদন্যা নায়েক আরও একটি অভিযোগ দায়ের করলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। তাতেই অর্ণব গোস্বামী ও আরও দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।