
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিষয়বস্তু আর মাধ্যম— দু’টোই ঐতিহাসিক। প্রথমটা জাতির জীবনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে। আর দ্বিতীয়টার সঙ্গে জাতীয় সংস্কৃতির আদিম স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং পটচিত্র, বাংলার আবেগ এবং ঐতিহ্যের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নিশান! এবার এদের একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করলেন মেদিনীপুরের একদল পটশিল্পী। স্থান, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি।
লাইব্রেরির উন্মুক্ত বারান্দায় বসে প্রায় ৪০ মিটার লম্বা পটচিত্র এঁকে চলেছেন তাঁরা। উদ্দেশ্য, আমজনতার দরবারে সুভাষের বীরত্বের কথা তুলে ধরা। তাঁরা জানেন, বাঙালি আত্মবিস্মৃত হতে পারে। ভুলে যেতে পারে আপন ইতিহাস। কিন্তু সুভাষের আত্মত্যাগ ভুলবে, এতটা ক্ষয়ের পথে এখনই পা বাড়ায়নি বাঙালি। তবু রাজনীতির নামে ধাপ্পাবাজির সময়ে দাঁড়িয়ে সুভাষকে নতুন আঙ্গিকে সামনে আনতে চেয়েছেন তাঁরা। সেই উদ্দেশ্যেই রং-তুলি আর কাপড়ের দীর্ঘ ক্যানভাসে সুভাষের বর্ণময় জীবনের কিছু টুকরো ফলককে সাজিয়ে তুলছেন পটুয়ারা।
বাংলা পটচিত্রের ঘরানা আজকের নয়৷ প্রাচীনকালে যখন কোনও রীতিসম্মত শিল্পকলা দানা বাঁধেনি, তখন থেকেই ধীরে ধীরে আড় ভেঙেছে পটচিত্র৷ একদিনেই বিকশিত হয়নি এই মাধ্যম। যেহেতু লোকশিল্পের ধারা, তাই গ্রামবাংলার পুরাতন ঐতিহ্যকে আত্মসাৎ করে রূপান্তরিত হয়েছে পটচিত্র। প্রধানত ধারাবাহিক ঘটনাই এর ক্যানভাসে ফুটে ওঠে। জড়ানো পট এবং চৌকো পট— দু’ভাগে একে ভাগ করা যায়। প্রথমটা আকারে বড়। দ্বিতীয়টা আকারে অনেক ছোট। কাপড়ের উপর গোবর ও আঠার প্রলেপ দিয়ে প্রথমে একটি জমিন তৈরি করা হয়। তারপর সেই জমিনের উপর তুলি দিয়ে শিল্পীরা বিভিন্ন ছবি এঁকে চলেন।
এ তো গেল উপাদানের কথা। আর বিষয়বস্তু? গবেষকরা জানাচ্ছেন, পটচিত্রে পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক — দু’ধরনের ঘটনা বরাবর ঠাঁই পেয়ে এসেছে। প্রথমটায় রাবণ বধ, সীতা হরণ, রাজা হরিশ্চন্দ্র, কৃষ্ণলীলা, দুর্গালীলা, সাবিত্রী-সত্যবান, মনসা মঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গলের জনপ্রিয় কাহিনি ফুটে ওঠে। আর ঐতিহাসিক ঘটনায় হিসেবে জায়গা করে নেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, জাপানে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের মতো ঘটনা।
মেদিনীপুরের শিল্পীরা স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যম হিসেবে জড়ানো পটকে বেছে নিয়েছেন। বিষয়বস্তু আদ্যোপান্ত ঐতিহাসিক। শুধু আয়তনের বিস্তৃতি নয়, রঙের ব্যবহার এবং সূক্ষ্ম কারুকাজও নজর টানে। ন্যাশনাল লাইব্রেরির বারান্দায় রং আর রেখার খেলায় বুঁদ পটশিল্পীরা। আপাতত চলছে আঙুল। আর মুখে মুখে ঘুরছে সুরেলা গান — ‘ব্রিটিশ বাহিনীকে করব না মোরা ভয়/ সাথে আছে সুভাষ বসু হবেই মোদের জয়।’