
দ্য ওয়াল ব্যুরো : কিছুদিন আগেই বিহারে এনডিএ ছেড়েছেন লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসোয়ান। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন তিনি। সোমবার সকালে চিরাগের পাশে দাঁড়ালেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, “চিরাগ পাসোয়ানের প্রতি নীতীশ কুমারজি যে ব্যবহার করেছেন, তা ঠিক নয়। এই সময় চিরাগের পাশে তাঁর বাবা থাকলে ভাল হত। কিন্তু রামবিলাস পাসোয়ানজি এখন আমাদের মধ্যে নেই। নীতীশ কুমারজি চিরাগের প্রতি অবিচার করেছেন।”
তিন দিন আগেই এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে চিরাগ বলেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে নীতীশ তাঁকে স্বান্তনা জানিয়ে একটি কথাও বলেননি। চিরাগ পরে জানান, রামবিলাস পাসোয়ানের দেহ যখন দিল্লি থেকে পাটনায় উড়িয়ে আনা হয়, নীতীশ কুমার বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নীতীশের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। কিন্তু নীতীশ তাঁকে উপেক্ষা করেন।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, খুব হিসাব করেই চিরাগকে সমর্থন করেছেন তেজস্বী। চিরাগের বাবা রামবিলাস পাসোয়ান এবং তেজস্বীর বাবা লালুপ্রসাদ যাদব একসময় রাজনীতিতে সহযোগী ছিলেন। তাঁদের সহযোগী ছিলেন নীতীশও। গত ৮ অক্টোবর রামবিলাস মারা যান। তখন লালুপ্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী শোকপ্রকাশ করেন।
তেজস্বী যাদব এবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন রাঘোপুর কেন্দ্র থেকে। অনেকের ধারণা, ওই কেন্দ্রে তেজস্বীকে জেতানোর জন্য গোপনে বোঝাপড়া করেছেন চিরাগ। সেজন্য তাঁর দল ওই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছে এক রাজপুত প্রার্থীকে। ওই প্রার্থী বিজেপির রাজপুত ভোট কাটবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সতীশ যাদব। ২০১০ সালে তিনি রাবড়ি দেবীকে পরাজিত করেন। তখন তাঁকে ‘জায়েন্ট কিলার’ আখ্যা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সতীশ হেরে যান তেজস্বীর কাছে।
চিরাগ কিন্তু কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “প্রচারে নরেন্দ্র মোদীর ছবি আমার লাগবে না। নরেন্দ্র মোদী আমার হৃদয়ে বিরাজমান। আমি হনুমানের মতো। আমার বুক চিরে শুধু মোদীজিকেই দেখা যাবে”। তাঁর কথায়, মোদীজির ছবি নীতীশ কুমারের প্রয়োজন। উনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
চিরাগ যে বিজেপি প্রেম দেখাচ্ছেন তাও নীতীশ-বিজেপি সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলেও মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের অনেকে। বস্তুত সেই কারণেই এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, চিরাগ যে ধন্দ তৈরি করতে চাইছেন তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু বিজেপি ও নীতীশ কুমারের সম্পর্ক অটুট। লোক জনশক্তি পার্টি কেবলই ভোট কাটুয়া হয়ে থেকে যাবে।
বস্তুত, বিহার তথা জাতীয় রাজনীতিতে অনেকের ধারণা হল চিরাগ-বিজেপি আঁতাত রয়েছে। তাঁরা আলোচনা করেই ঠিক করেছেন লোক জনশক্তি পার্টি কেবল জেডিইউ-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে। যাতে ভোটের পর বিজেপির আসন সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এখন সেই ধারণা কাটাতে সক্রিয়। উল্টে সুশীল মোদীরা বলছেন, রামবিলাসের মৃত্যুর পর চিরাগ মোদী মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হতে চান। তাই বিজেপির প্রতি প্রেম দেখাচ্ছেন। কিন্তু নীতীশের বিরুদ্ধে কটুকথা বন্ধ না করলে বিজেপিকেও চিরাগ সম্পর্কে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।