
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নদীমাতৃক সভ্যতায় নদীর গুরুত্ব যে অপরিসীম, সে কথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে তা যদি হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সুবিশাল নদী, তবে তা যে কত লক্ষ লক্ষ মানুষের জিয়নকাঠি হয়ে ওঠে, সে কথা লেখা আছে ইতিহাস ও ভূগোলের বইয়ে। ভারতের ক্ষেত্রে এমনই এক সুবিশাল ভূমিকা পালন করছে গঙ্গা নদী। সেই গোমুখ থেকে শুরু করে বাংলার দক্ষিণপ্রান্ত পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকা তার বুকে বেড়ে উঠেছে।
অথচ এ নদীর প্রতি আমাদের অবহেলার শেষ নেই। দূষণে জর্জরিত এ নদী। ক্রমাগত ভূমিক্ষয়ও নিত্যসঙ্গী। এ ছাড়াও রয়েছে মানুষের হাজার রকম উতপাত। কিন্তু গঙ্গা নদীকে ভারতের জনসভ্যতার স্বার্থেই রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। নদী না বাঁচলে হারিয়ে যাবে অনেক কিছুই। তথ্য বলছে, গঙ্গা নদীর উপর নির্ভর করে রয়েছে এদেশের অন্তত ৫০ কোটি মানুষের জীবন। কিন্তু দূষণে জর্জরিত নদীর আজ শ্বাস নেওয়াই দায়।

তাই সেই গঙ্গার মহিমা ফেরাতেই এই দীর্ঘ পদযাত্রার অভিনব পরিকল্পনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেম লোহুমি, গোপাল শর্মা এবং কর্নেল মাইক কেশ্বর। পরে আইআইটির অধ্যাপক আহমেদ জিয়া শেখ এবং শ্রী কৃষ্ণন যুক্ত হন এই দলে। বিশারদ গিরিজা ভারত, হিমবাহ এবং মহাসাগরবিদ রসিক রবীন্দ্রও এগিয়ে আসেন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব নিতে।

এ যাত্রার নাম ‘অতুল্য গঙ্গা’। গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণও করছেন সদস্যরা, পরিবেশ রক্ষার বার্তাও দিচ্ছেন তাঁরা, এসবের পাশাপাশি গঙ্গার পলিউশন-ম্যাপিংও করছেন। সব মিলিয়ে ৪৫টি বড় শহর, ৫০০-র বেশি পঞ্চায়েত, কয়েক হাজার স্কুল ঘুরছেন তাঁরা। ২০৩০ সালে গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করা লক্ষ্য তাঁদের।
এভাবেই গঙ্গা রক্ষা করার বার্তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা। পায়ে হাঁটতে শুরু করেছেন গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে। গোমুখ থেকে যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও, লকডাউনের জেরে তা শুরু করলে হয় উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ থেকে। প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পথে নেমেছেন তাঁরা। গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গার উত্তরপাড় দিয়ে হেঁটে আসছেন তাঁরা, ফের প্রয়াগরাজে ফিরবেন দক্ষিণ পাড় দিয়ে।
ইতিমধ্যেই হাজার কিলোমিটার মতো পথ পেরিয়ে, দিন কয়েক আগে তাঁরা এসে পৌঁছেছেন বাংলায়। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় এসে সেখান থেকে এখন হেঁটে এসেছেন নবদ্বীপ।
সব ঠিক থাকলে ৩০ জানুয়ারি তাঁদের কলকাতা শহরে আসার কথা। তার পরে রওনা দেবেন গঙ্গাসাগরের দিকে। সেখান থেকে ফের ফিরবেন গঙ্গার উৎস অভিমুখে।