
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বর্ধমানে বিজেপির পার্টি অফিসে গণ্ডগোলের ঘটনায় জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী-সহ ১৪ জনকে শোকজ করা হল। শনিবার বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় শোকজের চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে দলের সংবিধানের ২৫এ এবং ২৫সি ধারায় শোকজ করার কথা জানানো হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে তাঁদের। অন্যথায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নির্দেশেই এই শোকজ করা হয়েছে। শোকজের চিঠি প্রাপ্তির কথা জেলা সভাপতি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। তবে, শুনেছি শোকজ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলব না।”
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। বিজেপির অন্দরে নব্য ও আদিদের বিরোধ দেখা দিয়েছে বর্ধমানে। দলে পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা সভাপতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের লোকজনকে সভাপতি ও অন্যান্য পদে বসিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
এই অবস্থায় কিছুদিন আগে বর্ধমান শহরের নীলপুরে বিজেপির পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের লোকজন। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। তবে সেই সময়ে দলের তরফে পার্টি অফিস ভাঙা নিয়ে তেমন কোনও আন্দোলন হয়নি। দলের ক্ষমতাসীনরা ঘরছাড়া কর্মীদের পাশে সেভাবে দাঁড়াননি বলেই নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ। ঘরছাড়াদের নাকি পার্টি অফিসেও আশ্রয় দেওয়া হয়নি।

এমন ঘটনার পরে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কয়েকজনের বোঝাপড়া রয়েছে বলে নিচুতলার কর্মীরা দাবি করেছেন। শহরের এক নতুন চিকিৎসক নেতাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নাচানাচিও দলের নিচুতলার কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না বলেও বিজেপির একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। পুরনোদের ব্রাত্য করে রাখা নিয়েও রয়েছে সমস্যা।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দলের রাঢ়বঙ্গ কার্যালয়ে ধর্না দেওয়ার পরিকল্পনা নেন পুরনো কর্মীরা। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব তা বন্ধ রাখার জন্য নিের্দশ দেন, তার পরেও পুরনো কর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন। তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। এই ঘটনায় কয়েকজন পুরানো কর্মীকে পার্টি অফিসে ডাকা হয় আলোচনার নাম করে, কিন্তু সেখানে তাঁদের মারধর করা হয় বলে ফের অভিযোগ ওঠে।
মারধরের খবর চাউর হতেই বাইরে অপেক্ষমান পুরানো কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দু’পক্ষের মধ্যে ইট ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। রাস্তায় থাকা দু’টি ম্যাটাডোরে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলা সভাপতি-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু হয়।
এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে কারণেই তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন। এধরনের ঘটনা যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না, তার স্পষ্ট বার্তা দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পরেই জেলা সভাপতির কাছ থেকে রিপোর্ট চান রাজ্য নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও নিজস্ব নেটওয়ার্কে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন।
এই খোঁজখবরে ঘটনার পিছনে উভয় পক্ষের দোষ রয়েছে বলে ধরা পড়ে। এর পরেই রাজ্য নেতৃত্বকে উভয় পক্ষকে শোকজ করার জন্য বলা হয়। সেই মতো রাজ্য সভাপতি উভয় পক্ষের ১৪ জনকে শোকজ করার জন্য নির্দেশ দেন।
বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা স্মৃতিকান্ত মণ্ডল বলেন, “শোকজ করে দল আমাদের স্বীকৃতি দিল। সেই দিন আমাদের প্ররিকল্পনা করে মারধর করা হয়। জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী আগে তার পোষা গুণ্ডাদের মদ খাইয়ে রেখেছিল। তারা আমাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।”