
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ১৬ মাসের ছোট্ট শিশুকন্যার মাথায় বাসা বেঁধে ছিল এক মস্ত টিউমার। অস্ত্রোপচার করে সেই টিউমারকে তার নাক দিয়ে কেটে বার করলেন চিকিৎসকরা! ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম এন্ডোস্কোপিক সার্জারি। এত কম বয়সে সফল এন্ডোস্কোপিক সার্জারির উদাহরণ গোটা পৃথিবীতে এই প্রথম।
উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ওই শিশুকন্যা জন্মের পর থেকে স্বাভাবিকই ছিল। কয়েক মাস আগে হঠাতই তার মা লক্ষ করেন, তার দৃষ্টি স্বাভাবিক নয়। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে গেলে, তিনি চণ্ডীগড়ের পিজিআইএমইআর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন শিশুটিকে। সেখানেই এমআরআই করে ধরা পড়ে, ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত সে। টিউমারের আয়তন ছিল ৩ সেন্টিমিটার, যা বছর খানেকের বাচ্চাটির পক্ষে বেশ বড়। শুধু তাই নয়, অপটিক নার্ভের কাছাকাছিই বাড়ছিল সেটি, যে কারণে তার চোখের দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর পরেই মেডিক্যাল বোর্ড গছন করেন নিউরোসার্জারি ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসকরা। ইএনটি-বিশেষজ্ঞর মতামতও নেওয়া হয়। এর পরেই এন্ডোস্কোপিক সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কারণ এই এতটুকু বয়সে মাথার খুলি কেটে টিউমার অপারেশন করা ঝুঁকির হতে পারে বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা।
এ মাসের গোড়ার দিকে স্থির হয় দিন, ৬ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। সফল ভাবে বার করা হয় টিউমারটি। দিন দশেক আইসিইউ-তে ছিল সে, তার পরেই উন্নতি হতে শুরু করে তার। সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে, আর কোনও জটিলতা নেই। তার চোখের দৃষ্টিও এখন স্বাভাবিক।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ডের হাসপাতালে এভাবে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি করে টিউমার কেটে বাদ দেওয়া হয় দু’বছরের এক বাচ্চার। এ পর্যন্ত সেই ছিল এই সার্জারির কনিষ্ঠতম উদাহরণ। সে রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের ১৬ মাসের একরত্তি।
আরও পড়ুন: সদ্যোজাত সন্তানকে চিকিৎসা গবেষণায় দান করতে চান দম্পতি, বিরল ও করুণ দৃষ্টান্ত কলকাতায়
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত মাথার খুলি কেটেই এই ধরনের টিউমার অস্ত্রোপচার করা হয়, তা সম্ভব না হলে কখনও কখনও রেডিয়েশন থেরাপির সাহায্যও নেওয়া হয়। তবে গত কয়েক বছরে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি বেশি করা হচ্ছে। এটি আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং, অনেক দক্ষতারও প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এ সার্জারি আরও বেশি কঠিন। কারণ তাদের নাকের পথ অনেক ছোট হয়, মাথার খুলিও নরম হয়। বহু গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালি অপরিণত ও নরম অবস্থায় থাকে মাথা থেকে নাকের মাঝে।
এসবের পরেও চণ্ডীগড় পিজি হাসপাতালের চিকিতসক ডক্টর ধন্দপানি ও তাঁর দল সফল ভাবে অস্ত্রোপচারটি করেছেন, যা দেশের চিকিৎসা মহলে দুর্দান্ত এক মাইলফলক।