
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গরু পাচারে অভিযুক্ত আরও এক প্রভাবশালীর দুয়ারে পৌঁছে গেল সিবিআই।
এনামুল আর লালার বাড়িতে যখন কয়লা ও গরু পাচারের তদন্তে উপুর্যুপুরি হানা দিচ্ছে সিবিআই, তখন কয়েক সপ্তাহ আগে বারিক বিশ্বাসের নামটা শোনা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা বলেছিলেন, কে বারিক বিশ্বাস, কে এনামুল, কে লালা আর কে বিনয় মিশ্র সব জানি। সিবিআই একটা একটা করে সবার ব্যবস্থা করবে।
বুধবার সকাল থেকে সেই বারিক বিশ্বাসের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন সিবিআই গোয়েন্দারা।
পুরো নাম আবদুল বারিক বিশ্বাস। গোটা বসিরহাট তাঁকে বারিক নামেই জানে। তাঁর ভাই গোলাম বারিক বিশ্বাস ছিলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের শিল্প ও সড়ক কর্মাধক্ষ্য। এদিন তাঁর বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিবিআই।
কী অভিযোগ?
সিবিআই সূত্রে বলা হচ্ছে, তাঁদের কাছে খবর, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের কাণ্ডারী ছিলেন এই বারিক। এর আগে বিএসএফ এবং শুল্ক দফরের হাতে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি তাঁকে। জামিন হয়ে গিয়েছিল অল্প দিনেই। সাদায় ব্যবসা চালাতে তিনি ইট ভাঁটা চালান, পিছনে চলে গরু পাচারের কারবার।
এবার সেই বারিকই সিবিআইয়ের আতস কাচের নীচে। অভিযোগ, বারিক বিশ্বাস শুধু গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত তা নয়, সোনা, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন রাসায়নিক, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, খাদ্য সামগ্রী, বস্ত্র, জ্বালানী তেল এমন কি ওষুধ পাচারেও তাঁর নাম রয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর চব্বিশ পরগনায় এক দাপুটে নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বারিক। সেই ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই তাঁর বাড় বৃদ্ধি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাম জমানাতেই চোরা কারবার শুরু বারিকের। সিপিএমের অনেক নেতার হাত তাঁর মাথায় ছিল। তবে বাম জমানায় বারিকের রাজনৈতিক যোগ ছিল একেবারে গোপনে। কাকপক্ষী টের পেত না। কিন্তু ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের হারের শুরু দেখেই শিবির বদল শুরু করেন বারিক। ক্রমশ তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাঁর ভাইকে ২০১৩-র ভোটে জেলা পরিষদে প্রার্থী করে বড় দায়িত্ব দেয় তৃণমূল কংগ্রেস।
বিরোধীদের কথায়, ভাইকে শিখণ্ডি করেই প্রশাসনকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করতেন বারিক। সিবিআই মনে করছে, এনামুলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বসিরহাটের বারিক বিশ্বাসের। অর্থাৎ, গোটা পাচার প্রক্রিয়া একই সুতোয় গাঁথা। এনামুল এখনও জেল হেফাজতে। তাঁর ডায়েরি উদ্ধার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রভাবশালীদের নাম পাওয়া গেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির দাবি। হতে পারে সেই ডায়েরির সূত্র ধরেই বারিকের দুয়ারে পৌঁছে গেল সিবিআই।