
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গরু পাচার কাণ্ডে আদালতে চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। অবশেষে এনামুল সহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করেছে সিবিআই। সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চার্জশিট পেশ করা হয়। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানি।
সিবিআই সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্ত এনামুল হক ও বিএসএফ কম্যান্ড্যান্ট সতীশকুমারের নাম রয়েছে চার্জশিটে। তাছাড়াও গুলাম মুস্তাফা ও আনারুল শেখ-সহ আরও তিনজনের নাম রয়েছে তাতে। ওই তিনজন এনামূল ও সতীশ কুমারের পরিবারের সদস্য, এনামুল হকের স্ত্রী ও সতীশ কুমারের স্ত্রী এবং শ্বশুর। সকলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, মূল্যবান সম্পত্তি হাতানো-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এদিন সিবিআই আইনজীবী বিচারকের কাছে আবেদন করে বলেন, চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তাদের যেন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বর্তমানে গরু পাচারের মূলচক্রী এনামুল হক এখন জেল হেফাজতে রয়েছে। বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমার জামিনে মুক্ত থাকলেও সিবিআই’এর স্ক্যানারের তলায় রয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য বর্তমানে রাজ্য গরু ও কয়লা পাচার রুখতে তৎপর সিবিআই। গত বছর ৬ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গরু পাচারের মুলচক্রী এনামুলকে গ্রেফতার করে। এর পর তাঁকে আদালতে তোলা হলে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। এর আগে ১৭ নভেম্বর সীমান্ত গরু ও কয়লা পাচারের সঙ্গে অভিযুক্ত করা হয় বিএসএফএর আধিকারিক সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ১৮ নভেম্বর তাঁকে কোর্টে তোলা হয়। এর পর বেশ কয়েকবার শুনানির পরে ২১ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান সতীশ কুমার।
সতীশ কুমারের ওপর অভিযোগ ছিল, যে মোটা টাকার বিনিময়ে সীমান্তে পাচারে মদত দিতেন সতীশ। এর সঙ্গেই বিএসএফ-এর একাংশের বিরুদ্ধে সীমান্ত পাচারে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তোলে সিবিআই। উল্লেখ্য সিবিআই-এর দাবি ছিল, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের কম্যান্ড্যান্ট ছিলেন সতীশ কুমার। সেসময় ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ হাজার গরু বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ। অভিযোগ, সেই সময় কাগজে-কলমে গরুর বর্ণনাতে কারচুপিও করা হত।
এদিকে পাচার সম্পর্ক আরও তথ্য বার করতে এনামুল হক এবং সতীশ কুমারকে মুখোমুখি বসিয়ে ম্যারাথন জেরা চালানোর আবেদন করেছিল সিবিআই। কিন্তু এই আবেদন খারিজ করে দিয়ে এনামুলকে ১৪ দিনের জুডিসিয়াল কাস্টডিতে পাঠান বিচারক। ওই সময় এনামুলের বিরুদ্ধে চলা অন্য একটি মামলার রায় দেয় কলকাতা আদালত। তাতে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে এনামুলকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। কিন্তু এর পরবর্তীতে এনামুলকে সিবিআই কোর্টে তোলা হয়। সেখানে এনামুল জামিনের আবেদন করলে কোর্ট তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়।
তবে এই মামলায় এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডুকে মক্কেলের হয়ে জোর সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে। শেখর কুন্ডুর দাবি, তাঁর মক্কেল সব মিলিয়ে ৮৪ দিন সিবিআইয়ের হেফাজতে রয়েছে। যার মধ্যে ৫৫ দিন জেলে থাকতে হয়েছে তাকে। জেরা করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোন তথ্য এখনও সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। এই মামলায় ২ জনকে ধরা হয়েছে। আরও ২ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সেই দুজনের নামে অন্য মামলাও রয়েছে। তারা কোথায় কেউ জানে না। সিবিআই এখনও পর্যন্ত এমন কোন কিছু জোগাড় করতে পারেনি, যাতে প্রমাণ হয় যে, এনামুল গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
তাঁর আরও দাবি, এখানে কোন গরু পাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে গরু পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। গরু নিলাম করা হয়েছে। গরু উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছে। সেইসব জায়গায় কাউকে এই মামলায় ধরা হয়নি। এই গোটা ঘটনাকে তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর অভিযোগ, ”আমার মনে হচ্ছে, সেসব রাজ্য নিজেদের সরকার আছে বলে, সেসব জায়গায় কিছু করা হচ্ছে না। এই পশ্চিমবঙ্গে অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সরকার রয়েছে, তাই এই মামলায় নিয়ে এত তৎপরতা দেখানো হচ্ছে।”
পাশাপাশি এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র ও রাকেশ সিং বিচারকের কাছে জোর সওয়াল করে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, এনামুল হককে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতে।