দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত তৈরি হতে পারে তার সিঁদুরে মেঘ দেখাই যাচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে। শেষমেশ হলও তাই।
রবিবার রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে, কলকাতা, হাওড়া সহ বাংলার সাতটি জেলায় পরিস্থিতি গুরুতর। সেখানে ঠিকমতো লকডাউনের শর্ত মানা হচ্ছে না। তাই সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
চব্বিশ ঘন্টাও কাটল না। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, কোন যুক্তিতে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল কেন্দ্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্পষ্ট জানাতে হবে। নইলে ওই প্রতিনিধি দলকে বাংলায় কাজ করতে দেব না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্দেশ করে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কেন্দ্রকে আগে কারণ জানাতে হবে। নইলে রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে সাড়া দেবে না। মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্র একতরফা ভাবে যে পদক্ষেপ করেছে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শর্তকেই লঙ্ঘন করেছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, “কেন্দ্রের তরফে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর উদ্দেশ্য হল রাজ্যগুলিকে আরও সাহায্য করা। সেই কারণেই সব দিক মাথায় রেখে ওই প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে। তাতে যেমন পাবলিক হেল্থের বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তেমনই রয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলার কর্তাও। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নির্দেশ পাঠিয়েছে তা ভাল করে পড়লেই কার্যকারণ বোঝা যাবে। কেন্দ্র যে কোনও শর্ত লঙ্ঘন করেনি তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আন্তঃরাজ্য প্রতিনিধি দল পাঠানোর ব্যাপারে শুধু পশ্চিমবঙ্গকেই চিঠি দেয়নি। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান সরকারকেও চিঠি পাঠিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে সেই সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, অনেকের মতে হতে পারে এ ব্যাপারে বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখছেন।
আরও পড়ুন: কলকাতা, হাওড়া সহ বাংলার সাত জেলায় অবস্থা গুরুতর, আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে মোদী সরকার
আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের চিঠিতে যে একেবারেই কোনও যুক্তি দেয়নি তা নয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ওই জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য কর্মীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, কোথাও ব্যাঙ্কের বাইরে বা রেশন দোকানের বাইরে এমন ভাবে লাইন পড়ছে যে তাতে সোশাল ডিস্টেন্সিংয়ের শর্ত মানা হচ্ছে না। কোথাও বাজার খোলা থাকছে, রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলছে ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হল, আইনশৃঙ্খলা তো রাজ্যের বিষয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টিও কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ তালিকায় রয়েছে। তা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কি পারে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর ব্যাপারে এক তরফা সিদ্ধান্ত নিতে।
জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক পদস্থ আমলা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে জাতীয় বিপর্যয় বলে গণ্য করা হয়েছে। সেই কারণে বিপর্যয় মোকাবিলা খাতে রাজ্যগুলিকে সাহায্যও করা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইন (২০০৫) এ কেন্দ্র সরকারকে এ ব্যাপারে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতেও এদিন ওই আইনের প্রসঙ্গ রাখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগ করে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।