
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছারখার বাগবাজার এলাকা পরিদর্শন করতে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল, বুধবার বিকেলে বাগবাজারে আচমকা আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজার হাত বস্তির শতাধিক ঝুপড়ি। একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে থাকে। আগুন লেগে যায় সারদা মায়ের বাড়ির উদ্বোধন কার্যালয়েও। রাত দশটা নাগাদ আগুন আয়ত্তে এলেও, ক্ষয়ক্ষতি যে লাগামছাড়া সে কথা অনস্বীকার্য। আজ, বৃহস্পতিবার বেলা বারোটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কাল যতক্ষণ আগুন না নিভেছে, ততক্ষণ আমি এলাকায় যোগাযোগ রেখেছিলাম। আগুন নেভার পরেই প্রশাসকরা এলাকা ছেড়েছেন ও আমি আমার অন্য কাজ করতে গেছি। দমকল বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক– সকলে মিলে কাজ করেছেন কাল। আগুন নেভানোর পরে আমাদের কাজ ছিল আপনাদের কোনও একটা জায়গায় ঠিক করে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করার। আমরা সেটাও করেছি। আজ-কাল গোটা এলাকা পরিষ্কার হবে। তার পরে কলকাতা পুরসভা সব আগের মতো করে দেবে। চিন্তার কারণ নেই।”
তিনি পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত পরিবারে চাল, ডাল, আলু, দুধ, বিস্কুট পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছে দিতে। সেই সঙ্গে শাড়ি, শার্টপ্যান্ট, চাদর, কম্বল– এসবও যেন পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি মেয়রের ওপর, পুলিশের ওপর দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি, সবটা করে দেবে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা আছি।”
ভিড়ের মধ্যে থেকে প্রশ্ন ওঠে, ‘দিদি রান্না করব কীসে?’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, “যতক্ষণ সব না হচ্ছে আমরাই খাওয়াব। তার আগে অবধি সবাই বাগবাজার উইমেন্স কলেজে থাকুন।”
গতকাল সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাগবাজার উইমেন্স কলেজের কাছে ব্রিজ-লাগোয়া হাজার হাত বস্তি এলাকায় আগুন লাগার পরেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে উত্তুরে হাওয়ায়। মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়ে যায়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন। শ্যামপুকুর থানার পুলিশও পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে খবর।
বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যেই তাঁদের সর্বস্ব পুড়ে গিয়েছে। বস্তির ভিতরে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে গঙ্গাসাগর থেকে বাগবাজারে চলে আসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
দমকলের তরফে জানানো হয়, পাশেই বাগবাজার খাল থাকায় জলের সমস্যা হয়নি। তবে কী কারণে এই আগুন লেগেছে তার কারণ স্পষ্ট নয়। আগুন লাগায় লক গেট ব্রিজ ও আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামাতে হয় র্যাফও।
একটু বেশি রাতে খবর আসে, বাগবাজারে মা সারদার বাড়ির একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই আগুন। বাগবাজারের হাজার হাত বস্তির পশ্চিম দিকেই মায়ের বাড়ি। তার পিছনের অংশে উদ্বোধনী কার্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। বইয়ের গুদামেও তা ছড়িয়ে পড়েছে।লাইব্রেরি ও অনেকগুলি কম্পিউটার পুড়ে গিয়েছে বলে খবর। মায়ের বাড়িতে আগুন ছড়ানোর পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকল কর্মীদের সঙ্গে হাত মেলান মহারাজরাও।
শেষমেশ রাত ১০টা নাগাদ আয়ত্তে আসে আগুন।