
দ্য ওয়াল ব্যুরো : কোভিড অতিমহামারীর মধ্যে অর্থনীতি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, অর্থনীতিকে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। না হলে বাজারে চাহিদা বাড়তে সময় নেবে আরও বেশি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অ্যানুয়াল রিপোর্টে বলা হয়, “জুনে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকের মূল্যায়ন করে দেখা গিয়েছে, চাহিদার ওপরে অতিমহামারীর প্রভাব পড়েছে সাংঘাতিক। কোভিড শুরু হওয়ার আগে বাজারে যে চাহিদা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যেতে এখনও অনেক সময় লাগবে।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, বাজারে ব্যক্তিগত চাহিদা কমেছে। পরিবহণ, হোটেল শিল্প, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ভারতের অর্থনীতি এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম। এদেশের জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে ভোগ্যপণ্যের বাজার থেকে।
করোনা সংকট থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য ২১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করার জন্য। বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য সহায়তা করা হয়েছে কম।
ব্লুমবার্গের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ঘাটতি হবে জিডিপি-র ৭.২ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘাটতি যে পর্যায়ে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন, বাস্তবে ঘাটতি তার চেয়ে বাড়বে।
অর্থনীতি নিয়ে বুধবারই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, মিডিয়া যদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে চায়, তার ফল গরিবের পক্ষে ভাল হবে না। মিডিয়া যদি অর্থনৈতিক সংকটের কথা না লেখে, তা হলেই সেই সংকট শূন্যে মিলিয়ে যাবে না। আমি গত কয়েক মাস ধরে যা বলে আসছি, এবার সেকথাই স্বীকার করে নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থনীতি সংকুচিত হবে। তার কারণ তিনটি। করোনা অতিমহামারী দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হয়েছে। বর্ষায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও দেখা গিয়েছে অস্থিতিশীলতা। ২০০টি দেশে অতিমহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশ হয়ে পড়েছে স্তব্ধ। সেজন্য আমাদের দেশেও বিকাশের হার কমবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, কোভিড ১৯ অতিমহামারীর ফলে ব্যাঙ্কনোটের সরবরাহ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “২০১৯-২০ সালে ব্যাঙ্কনোটের সরবরাহ ছিল তার আগের বছরের তুলনায় ২৩.৩ শতাংশ কম। কোভিড অতিমহামারী ও লকডাউনের ফলে সরবরাহ হ্রাস পেয়েছিল।
আর কিছুদিনের মধ্যেই ৩০ জুন শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে ভারতে মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হবে। তার আগেই রিপোর্ট পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কেরলের ওয়ানাড় থেকে নির্বাচিত সাংসদ রাহুল এর আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, কোভিড সংকট যথাযথভাবে সামলাতে পারেনি মোদী সরকার। তার ফলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি।