
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের দায়ে পকসো আইনে ফাঁসির সাজা হল বোলপুর আদালতে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, পকসো (প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে ফাঁসির সাজা রাজ্যে সম্ভবত প্রথম। সাজাপ্রাপ্ত যুবকের নাম আসগর চৌধুরী। এমন শাস্তিতে খুশি নাবালিকার পরিবার। এমন রায় শোনার পরে দ্রুত বিচারের আশায় বুক বাঁধছেন বোলপুর আদালতে পকসো আইনে মামলা চলা অন্য নির্যাতিতার পরিবারগুলিও।
বোলপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের একটি গ্রামে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল দুপুরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে ওই গ্রামেরই যুবক আসগর চৌধুরী। চরম শারীরিক নির্যাতনের ফলে ওইদিনই মৃত্যু হয় নাবালিকার। মৃতার বাবা লাভপুর থানায় মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আসগর চৌধুরী ও তাঁর বাবা-মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মামলার সরকারি আইনজীবী তপন দাস জানান, পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৭৬ এ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়। বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ২০১৮ সালের ৬ জুলাই আসগর চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করে পুলিশ। তপনবাবু আরও বলেন, “বৃহস্পতিবার আসগর চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক৷ আজ, শুক্রবার বোলপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা এজলাসের বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা দেন।” সেই সাজা হল পকসো আইনে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের উপর যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০১২ সালে এই আইন হয়।
বোলপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকায় অভিযুক্তের বাবা ও মাকে বেকসুর খালাস করেছেন বিচারক। ফাঁসির সাজা দেওয়ার পাশাপাশি নাবালিকার পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারক। রাজ্য সরকারের হাতে ওই টাকা দিতে হবে বলে জানা গিয়েছে। পকসো আইনে ফাঁসির এই রায়কে ঐতিহাসিক বলছেন আইনজীবীরা।
অসমে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পকসো আইনে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল অসমের জেলা ও দায়রা আদালত। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরপ্রদেশের সালোনের এক আদালতে ২০১৪ সাল থেকে চলে আসা একটি মামলায় পকসো আইনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়।
আইনজীবীরা জানান, নাবালিকার উপর পাশবিক অত্যাচারের জন্য পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারা দেওয়া হয়েছিল। এই ধারায় দোষ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ডের রায় হতে পারে। সংশোধিত পকসো আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। তারপর থেকেই অন্যান্য রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। এই রাজ্যে সম্ভবত এই প্রথম এমন রায়।