
দ্য ওয়াল ব্যুরো : উত্তরাখণ্ডে অলকানন্দা নদীর তীরে শান্ত একটি গ্রামের নাম লাসু। রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ সেখানে দেখা গিয়েছিল আশ্চর্য দৃশ্য। যে মাছেরা থাকে জলের গভীরে, তারা ভেসে উঠেছিল ওপরে। অত মাছ ভেসে থাকায় নদীর স্রোত হয়ে গিয়েছিল রুপোলি। কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকশ গ্রামবাসীর ভিড় জমে যায় নদীর ধারে। অনেকেই মাছ ধরতে থাকে। ছিপ কিংবা জাল ফেলে মাছ ধরতে হচ্ছিল না। দিব্যি হাত দিয়েই ধরা যাচ্ছিল মাছ।
আরও অনেক গ্রামের বাসিন্দারা রবিবার সকালে নদীতে মাছ ভেসে উঠতে দেখেছেন। মাছেরা সাধারণত নদীর মাঝখান দিয়ে সাঁতার কাটে। কিন্তু এদিন তারা সাঁতার কাটছিল নদীর ধার দিয়ে। গ্রামবাসীরা এদিন আরও একটা অদ্ভূত দৃশ্য দেখেছিলেন। উত্তরাখণ্ডে নদীর জলের রং সবুজাভ। কিন্তু রবিবার সকালে জলের রং হয়ে গিয়েছিল ধূসর।
লাসু গ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার উঁচুতে, সকাল ন’টার কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে পড়ে হিমবাহ। তার ফলে ধৌলিগঙ্গা, ঋষিগঙ্গা ও অলকানন্দা নদীতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী কে শিবকুমার জানিয়েছেন, মাছেরা অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। বহু দূরে নদীতে কোনও কম্পন হলে তারা টের পায়। তারা সম্ভবত বুঝতে পেরেছিল বহু দূরে একটি হিমবাহের অংশ ভেঙে পড়েছে।
উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের আগে মাছেদের অদ্ভূত আচরণের কারণ কী, তা নিয়ে বিশদে জানতে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সোমবার ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-র সঙ্গে যুক্ত এক প্রথম সারির বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, হিমবাহের ঝুলন্ত একটি অংশ মূল হিমবাহ থেকে ভেঙে নীচে পড়ে যায়। তার ফলেই রবিবার ধৌলিগঙ্গা নদীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল।
ডিআরডিও-র ডিফেন্স জিও ইনফর্ম্যাটিকস রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টের ডিরেক্টর এল কে সিনহা বলেন, “চামোলিতে যে হিমবাহটি ভেঙে পড়েছে, আকাশপথে তা লক্ষ করেছে আমাদের টিম। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, হিমবাহের একটা অংশ ঝুলছিল। সেই অংশটি হিমবাহের মূল অংশ থেকে একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় ভেঙে পড়েছিল।”
উপত্যকায় একটি হ্রদ ছিল। সেই হ্রদের জল উপচে পড়ে বিপর্যয় ঘটেছে। আপাতত আকাশপথে সমীক্ষা করে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রয়োজন হলে আরও তথ্যের জন্য ফের আকাশপথে সমীক্ষা করা হবে।
যোশীমঠ থেকে আইটিবিপি-র এডিজি মনোজ রাওয়াত জানান, “হিমবাহ ভেঙে পড়ার ফলে রাইনি গ্রামে একটি সেতু বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ১৩ টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লাটা ও রাইনি অঞ্চলে গ্রামগুলিতে আকাশ থেকে খাবার ফেলা হচ্ছে।”