
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী আজ নবান্নে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আধ ঘণ্টা মতো কথা হয় তাঁদের। বৈঠকের পরে ত্বহা জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের আগেই তিনি যেতে পারেন ফুরফুরা শরীফে।
আগামী মাসের ৬, ৭, ও ৮ তারিখে তিনদিন ব্যাপী ধর্মীয় উৎসব উরস রয়েছে ফুরফুরা শরীফে। প্রতিবারই হয় এই উরস উৎসব। কয়েক লক্ষ মানুষ জমায়েত করেন। সেই অনুষ্ঠানের বিষয়ে কথা বলতে এবং ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেই আজ নবান্নে এসেছিলেন ত্বহা।
ত্বহা সিদ্দিকী এদিন বৈঠকের পরে জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, ওই ধর্মীয় উৎসব অর্থাৎ উরস উৎসব চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফুরফুরা যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনাও ৯৯ শতাংশ। তবে যদি যাওয়া একান্ত সম্ভব না হয় তাহলে ভোটের আগে অবশ্যই একবার তিনি ফুরফুরা শরীফে যাবেন প্রার্থনা করতে।
প্রসঙ্গত, এত দিন ধরে ফুরফুরা শরীফ এবং দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশের সংখ্যালঘু মানুষজনের উপর ত্বহা সিদ্দিকীর বড় প্রভাব ছিল। এলাকার রাজনীতিও খানিকটা নিয়ন্ত্রিত হতো তাঁর মাধ্যমেই। সমস্ত নেতানেত্রীকে দেখা যেত ভোটের আগে ত্বহা সিদ্দিকীর কাছে যেতে। প্রতি বছরই মার্চ মাসে যে উরস উৎসব হয় ফুরফুরায়, সেখানেই দেখা যেত নেতাদের, ত্বহা সিদ্দিকীর কাছে সমর্থন চাইতে যেতেন তাঁরা। বামেরাও ফুরফুরার উরস উৎসব এড়িয়ে যায় না। এমনকি যে বিমান বসু কখনও কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান না, তিনিও উরসের সময়ে ফুরফুরা ঘুরে এসেছেন। ২০১৪ সালে বড় বুজুর ইব্রাহিম সিদ্দিকীর বাড়িতে বসে লুচি মাংস খেতে গিয়ে তাঁর সাদা পাঞ্জাবিতেই পড়ে গিয়ে সে কী কাণ্ড।
সে যাই হোক, এবার ত্বহা সিদ্দিকীর অবস্থান কী হবে, তাই নিয়ে অনেকবারই জলঘোলা হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু এইবার সে হিসেব খানিক বদলে গেছে। ওই এলাকার রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এবার নতুন দল গড়ে ফেলেছেন আব্বাসউদ্দিন। জোট আলোচনা চলছে পুরোদমে। একথা স্পষ্ট, যে যদি জোট না হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংখ্যালঘু এলাকায় প্রার্থী দাঁড় করাবেন আব্বাস।
পরিস্থিতি যখন এরকম, তখনই নবান্ন দেখা গেল ত্বহাকে। জানা গেল, মমতাও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ফুরফুরায় যাওয়ার। এখন অনেকেরই চোখে পড়ছে, এতদিন ধরে যখন এই দল-গড়া, আলোচনা চলছে, সেখানে কোথাও দেখা যায়নি ত্বহা সিদ্দিকীকে। এটা কাকতালীয় না ইচ্ছাকৃত সে প্রসঙ্গ আলাদা। তবে হঠাৎ করে আজ নবান্নে ত্বহা সিদ্দিকীকে আসতে দেখে অনেকেই মনে করছেন, আব্বাস ও জোটের বোঝাপড়া যখন চলছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ত্বহাকে ডেকে বা ফুরফুরায় গিয়ে আব্বাস-জোটের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চাইছেন ও সমর্থন খুঁজছেন ত্বহার মাধ্যমে।