দ্য ওয়াল ব্যুরো, আলিপুরদুয়ার: ইউএসপি নাকি লুকিয়ে চাটনিতেই। তার সঙ্গতেই “আহা”। হোক না মুচমুচে মোচার চপ বা খাস্তা চিংড়ির চপ। চাটনিতে ডুবিয়ে মুখে চালানের অপেক্ষা। তারপরেই স্বর্গীয় অনুভূতি। তেমনটাই মত খাদ্যরসিক মহলের।
তা সে যা-ই হোক, আলিপুরদুয়ার স্টেশন লাগোয়া চৌপট্টির ডিআরএম চপ খেতে নাকি ছুটে যাওয়া যায় কলকাতা থেকেও। এ কেবল কথার কথা নয়। সত্যিই নাকি যান অনেকে। ডিআরএম চপ নামটা অনেকেই প্রথম শুনলেন তো? ভাঁজ পড়ল ভুরুতে। আসলে ব্র্যান্ডিংটাই যে হয়ে গিয়েছে এমন। দোকানের নাম সেখানে গৌণ। আদতে তেমন ভাবে কোনও নামও নাকি আসলে নেই।
আলিপুরদুয়ার স্টেশনের উত্তর দিকে ডিআরএম অফিস, রেল কোয়ার্টার্স। সেখানেই বছর পঞ্চাশেক আগে এই চপের দোকান খুলেছিলেন দেবকুমার দাস। সে-ও আবার এক গল্প। ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই নাকি শিখেছিলেন নানা ধরনের চপ তৈরির কৌশল। তখনও আলিপুরদুয়ারের ছোট্ট শহরে তেমন চল ছিল না চপ-তেলেভাজার। রেল কোয়ার্টার্সের সামনেই, সেখানকার বাসিন্দাদের ভরসাতেই চৌপট্টিতে চপের দোকান খুলে বসেছিলেন দেবকুমারবাবু। মোচার চপ, আলুর চপ, ইত্যাদি ছাড়াও তৈরি করতে লাগলেন মাছের চপ, চিংড়ির চপ, মাংসের চপ। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের জীবন তো কেটেই গেছে, তাঁর ছেলের পর এখন দোকানের ভার পড়েছে নাতি জয়ন্তর উপর। ডিআরএম অফিস সংলগ্ন এলাকার এই চপের প্রসিদ্ধিও ডিআরএম চপ নামেই।
বছর ২৭ এর যুবক জয়ন্ত জানালেন, সকালের দিকে বন্ধই থাকে দোকান। চালু হয় বিকেল চারটে নাগাদ। তার পর রাত আটটা পর্যন্ত দোকানের চার জন কর্মচারীর কারও আর এক মুহূর্তেরও অবসর থাকে না। রীতিমতো লাইনে দাঁড়িয়ে চপ কেনেন আশপাশের বাসিন্দারা। খ্যাতি এতটাই যে, এ পথে এলে সে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের বাসিন্দারাও। পাঁচ টাকা থেকে দাম শুরু, তার পর, মাছ-মাংস-ডিম ভেদে এক একটি চপের দাম ১৫ টাকা পর্যন্ত।
জয়ন্ত বলেন ‘‘দাদু যে কৌশলে চপ তৈরি করতেন, এত বছর পরেও সেটাই বজায় রেখেছি। শুধু সময়ের চাহিদা মেনে আরও একটু বেশি খাস্তা ও মুচমুচে করে তৈরি করা হচ্ছে এখন। তবে দাদু চপের চাটনি যে ভাবে তৈরি করতেন তা এখনও একই রাখা হয়েছে।’’
দেখে নিন চপের দোকানের দৃশ্য।
ডিআরএম চপের বিক্রি দিনে প্রায় তিন হাজার পর্যন্তও হয়, এমনটাই জানিয়েছেন দোকানের বর্তমান মালিক। পালা পার্বণে এই সংখ্যাটাই বেড়ে যায় আরও। চপের এমন নাম ডাক হলেও এখনও কিন্তু অস্থায়ী ছাউনিতেই বিক্রিবাটা। ভবিষ্যতে দোকান বড় করা তেমন কোনও উচ্চাশা আপাতত নেই। তবে যেমন নাম আর স্বাদ সেটা বজায় থাকুক এমনটাই চাইছেন ডিআরএম চপের বর্তমান কর্ণধার।