
‘সুশান্তই কেবল মাদক নিতেন’, ফের জামিনের আবেদনে দাবি রিয়ার
দ্য ওয়াল ব্যুরোঃ মুম্বইয়ের বাইকুল্লা জেলে দু’সপ্তাহ কাটানোর পরে ফের জামিনের আবেদন করলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। আগের বার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। নিজের আবেদনে অভিনেত্রী দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরের তদন্ত করেছে সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আবেদনে রিয়া আরও দাবি করেছেন, নিজের মাদকের নেশা বজায় রাখার জন্য সবাইকে ব্যবহার করতেন সুশান্ত। তিনিই কেবল মাদক নিতেন বলে দাবি অভিনেত্রীর।
আগামীকাল বম্বে হাইকোর্টে রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিকের জামিনের আবেদনের শুনানি। আজকেই এই শুনানি হত। কিন্তু মুম্বইয়ের লাগাতার বৃষ্টির ফলে তা একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাদক যোগের অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে নেমে বলিউডে মাদক যোগের হদিশ পায় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, এই চক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রিয়া। গতকালই ৬ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর বিচারবিভাগীয় হেফাজতের সীমা বাড়ানো হয়েছে। তারপরেই জামিনের আবেদন করেছেন তিনি।
আবেদনে রিয়া জানিয়েছেন, “কেবল সুশান্ত সিং রাজপুত মাদক নিতেন। তিনি নিজের কর্মচারীদের মাদক আনার জন্য ব্যবহার করতেন। যদি আজ সুশান্ত বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁকেও হয়তো অল্প পরিমাণে মাদক নেওয়ার অপরাধে জামিন যোগ্য ধারায় খুব বেশি হলে এক বছরের সাজা শোনানো হত।” তাহলে যিনি মাদক নিয়েছেন তাঁকে খুব বেশি হলে এক বছরের সাজা আর যিনি মাঝেমধ্যে সেই মাদকের টাকা দিয়েছেন (পড়ুন রিয়া) তাঁকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা কাটাতে হবে কেন।
জামিনের আবেদনে রিয়া আরও জানিয়েছেন, “সুশান্ত নিজের মাদকের নেশা বজায় রাখার জন্য তাঁর কর্মচারী, রিয়া, শৌভিক ও আরও অনেককে ব্যবহার করতেন। তিনি নিজে কোনও লেনদেন করতেন না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে সুশান্ত নিজের নেশা বজায় রাখার জন্য অন্যদের ব্যবহার করতেন। কিন্তু সেটা জানাজানি হলে তিনি নন, অন্যরাই অভিযুক্ত হবে এমন ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তিনি।”
এখানেই থেমে থাকেননি রিয়া। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর তিন দিন আগেও নিজের রাঁধুনি নীরজকে গাঁজার জয়েন্ট বানিয়ে তাঁর বেডরুমে রেখে দেওয়ার কথা বলেছিলেন সুশান্ত। নীরজ সিবিআই ও মুম্বই পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি অনেক জয়েন্ট বানিয়ে সেগুলো সুশান্তের ঘরে একটি বাক্সের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন। সুশান্তের মৃত্যুর পর সেই বাক্স ফাঁকা পাওয়া যায়। তাহলে সেই মাদক কে নিয়েছেন? কারণ সেই সময় রিয়া সেখানে ছিলেন না। একাই নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন সুশান্ত।
রিয়ার জামিনের আবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই সব তথ্য থেকে প্রমাণিত কেবলমাত্র সুশান্তই মাদক নিতেন। বাকিদের ব্যবহার করেছেন তিনি। ৪৭ পাতার একটি আবেদন করেছেন রিয়া। সেখানে তিনি এও অভিযোগ করেছেন, সুশান্তের মানসিক অবসাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাঁর বোনরা তাঁকে ফেলে চলে গিয়েছেন।
নিজের আবেদনে রিয়া আরও জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কের শুরুতে সুশান্তের এই অভ্যেস ছিল না। কিন্তু কেদারনাথ ছবির শুটিং করতে গিয়ে সিগারেটের মধ্যে গাঁজা মিশিয়ে খাওয়ারে অভ্যেস হয়েছিল তাঁর। সেটা দিন দিন বাড়ছিল। রিয়ার অভিযোগ, অথচ তদন্ত চলাকালীন সুশান্তের ফোন কল, মোবাইল ডিটেইলস, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেজ বা ইমেলের কথা জানানো হয়নি, যেখানে স্পষ্ট তিনি কী ভাবে নিজের মাদকের নেশার জন্য তাঁকে, তাঁর ভাইকে ও অন্য কর্মচারীদের ব্যবহার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে খালি একটাই অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি সুশান্তকে মাদক এনে দিয়েছেন। তাছাড়া কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। আর এই অভিযোগও যে সত্যি নয়, সেই আবেদনই করেছেন রিয়া। এখন দেখার তাঁর এই জামিনের আবেদনে কী নির্দেশ দেয় বম্বে হাইকোর্ট।