
দ্য ওয়াল ব্যুরো : বুধবারই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, কৃষি আইনগুলি আগামী দেড় বছর কার্যকর করা হবে না। এরপর বৃহস্পতিবার কাজ শুরু করল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্যানেল। কৃষি আইন নিয়ে ওঠা বিতর্কের মীমাংসা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট চার সদস্যের প্যানেল তৈরি করেছিল। তার এক সদস্য ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন। অপর তিন সদস্য এদিন ১০ টি কৃষক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন। দু’মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট পেশ করবে ওই প্যানেল।
সুপ্রিম কোর্ট প্যানেল গড়ার পরে কৃষকরা জানিয়ে দেন, যতদিন না তিনটি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে, ততদিন তাঁদের এই আন্দোলন চলবে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্যানেলের সঙ্গেও কোনও রকম সহযোগিতা করতে রাজি নন তাঁরা। কৃষক আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য, “আমরা আগেই জানতাম নিজের ঘাড় থেকে দায় সরাবার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একটা প্যানেল গঠন করবে। তাই আগের দিন রাতেই আমরা জানিয়েছিলাম, কোনও প্যানেলের সঙ্গে আমরা কথা বলব না। কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
সুপ্রিম কোর্ট যে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল তার সদস্যরা হলেন, কৃষি অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি, শ্বেতকারি সংঠনের সভাপতি অনিল ঘানওয়াত, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের সভাপতি ভুপিন্দর সিং মান এবং আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি বিশেষজ্ঞ প্রমোদ কুমার যোশী।
গত ১৪ জানুয়ারি কমিটির সদস্য ভূপিন্দর সিং মান পদত্যাগ করেন। তার পরে একটি কৃষক ইউনিয়ন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে, কমিটির বাকি তিন সদস্যকেও সরিয়ে দেওয়া হোক। তারপর নতুন কমিটি গঠন করুক শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এই দাবি মেনে নেয়নি। বৃহস্পতিবারের খবর অনুযায়ী, অন্তত ১০ টি ইউনিয়ন প্যানেলের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে।
এর পাশাপাশি এদিন আন্দোলনরত কৃষকরা দিল্লি পুলিশের সঙ্গে দেখা করেন। ২৬ জানুয়ারি দিল্লির আউটার রিং রোড ধরে ট্র্যাক্টর মিছিলের অনুমতি চান তাঁরা। পুলিশ তাঁদের অনুমতি দেয়নি। পুলিশ অফিসাররা বিকল্প প্রস্তাব দেন, কৃষকরা প্রজাতন্ত্র দিবসে কুণ্ডলি-মানেসর-পালওয়াল এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মিছিল করতে পারেন। কৃষক নেতারা তাতে রাজি হননি।
গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়ে বলেছিল, ট্র্যাক্টর মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। সোমবারই শীর্ষ আদালত এসম্পর্কে রায় দিতে অস্বীকার করে। বুধবার বিচারপতিদের বেঞ্চ বলে, “কোনও মিছিলে অনুমতি দেওয়া বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা আমাদের কাজ নয়। পুলিশই এসম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিক। আমরা কোনও রায় দেব না।”
দিল্লি সীমান্তে অবস্থানরত কৃষকরা আগেই জানিয়েছিলেন, সরকার তাঁদের দাবি মেনে না নিলে ২৬ জানুয়ারি ট্র্যাক্টর মিছিল বার করবেন। ওইদিন হরিয়ানাতেও কৃষকরা ট্র্যাক্টর মিছিল বার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম থেকে একটি করে ট্র্যাক্টর আনতে বলা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা আশা করছেন, ২৬ জানুয়ারি ২০ হাজার ট্র্যাক্টর নিয়ে মিছিল করতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় সরকার শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিল, ২৩ তারিখে দিল্লিতে কুচকাওয়াজের রিহার্সাল হবে। ২৮ জানুয়ারি শহরে শোভাযাত্রা করবে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর। ২৯ জানুয়ারি হবে বিটিং দ্য রিট্রিট। ৩০ জানুয়ারি পালিত হবে ‘শহিদ দিবস’। এই অনুষ্ঠানগুলিতে বিঘ্ন ঘটলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি তো হবেই, সেই সঙ্গে সারা দেশই অস্বস্তিতে পড়বে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, প্রত্যেকের আন্দোলন করার অধিকার আছে ঠিকই কিন্তু বিশ্বের সামনে দেশকে অপমান করার অধিকার কারও নেই। শীর্ষ আদালতের কাছে সরকার আবেদন করেছিল, ২৬ জানুয়ারি রাজধানী বা তার আশপাশের এলাকায় কাউকে যেন ট্যাক্টর, ট্রলি বা অন্য গাড়ি নিয়ে মিছিল করার অনুমতি না দেওয়া হয়।