
দ্য ওয়াল ব্যুরো : শুক্রাবার মিলাদ উন নবি উপলক্ষে হজরতবাল দরগায় প্রার্থনা করতে যাচ্ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। কিন্তু পথেই তাকে বাধা দেয় প্রশাসন। ফারুকের দল ন্যাশনাল কনফারেন্স থেকে টুইট করে এমনই দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনার নিন্দা করে ন্যাশনাল কনফারেন্স বলেছে, প্রশাসন ফারুকের প্রার্থনা করার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে।
পরে ওই টুইটে লেখা হয়েছে, ফারুকের বাড়ি ‘ব্লক’ করে দিয়েছে প্রশাসন। তিনি দরগা হজরতবালে প্রার্থনা করতে যাচ্ছিলেন। তাঁকে আটকানো হয়েছে। পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেত্রী তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও ওই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, “ভারত সরকার আতংকিত। সেজন্যই নবিদিবসে ফারুক সাহেবকে হজরতবাল দরগায় প্রার্থনা করতে যেতে দেয়নি।”
কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের আগে গতবছর ৫ অগস্ট গৃহবন্দি করা হয় ফারুক আবদুল্লাকে। সেইসঙ্গে গৃহবন্দি বা সতর্কতামূলক গ্রেফতার করা হয় কাশ্মীরের আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, মেহেবুবা মুফতি-সহ কয়েকশ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। মার্চে ফারুককে মুক্তি দেওয়া হয়।
ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দি থাকা নিয়ে সংসদে কম হট্টগোল হয়নি। শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী ভরা সংসদে বলেছিলেন, “ফারুক আবদুল্লা কোথায়? উনি সাংসদ। উনি সভায় নেই কেন?”
এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বহু বিদেশি প্রতিনিধি কাশ্মীরে গিয়েছেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, দেশে এমন গণতন্ত্র কায়েম করে রাখা হয়েছে যে, বিদেশিরা এসে সেখানে ঘুরতে পারেন অথচ দেশের সাংসদকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
মাস দুই আগে ফারুক-পুত্র ওমরের গাল ভরা দাড়ির ছবি নিয়ে কম হইচই হয়নি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত বলেছিলেন, “কী অবস্থা কাশ্মীরের! ওমরকে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”
যদিও এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, কাশ্মীরের সব নেতাকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক বলে দাবি করেছিলেন শাহ। এর আগে গত ডিসেম্বর মাস থেকে স্থানীয় নেতাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছিল জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই মামলার তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট। এর মধ্যে ইডি ৮২ বছর বয়সী ফারুককে সাত ঘণ্টা জেরা করেছে। জেরার পর তিনি বলেছেন, “আমি আদৌ উদ্বিগ্ন নই। কেন উদ্বিগ্ন হব? দুঃখের কথা একটাই। জেরার জন্য আমি লাঞ্চ করতে পারিনি।”
ন্যাশনাল কনফারেন্সের বক্তব্য, সম্প্রতি ফারুক কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন দলকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। সেজন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ইডিকে দিয়ে ফারুককে হেনস্থা করছে।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র বলেন, “কাশ্মীরে পিপলস অ্যালায়েন্স তৈরি হওয়ার পরেই ইডি থেকে ফারুককে চিঠি দেয়। এভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে। বিজেপি কারও সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই চালাতে পারে না। তাই তারা সরকারের এজেন্সিগুলির মাধ্যমে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করে।”