দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেরলের পালাক্কাড়ে নৃশংস ভাবে হাতি হত্যার ঘটনা নিয়ে গতকালই একবার মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বৃহস্পতিবার ফের তিনি জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় তিন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে। ন্যায় বিচার হবেই।
বিস্ফোরক ভর্তি আনারাস খাইয়ে হাতি হত্যা করার ওই নৃশংসতা দেখে গোটা দেশ কার্যত এখন রাগে ফুঁসছে। শুধু দেশের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ নেই। দুনিয়া জুড়ে মানুষ এ ঘটনায় মর্মাহত। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবিও উঠেছে। বড় কথা হল, এ ঘটনায় ঈশ্বরের আপন দেশ ‘কেরলের’ ভাবমূর্তিতেও আঁচ পড়েছে। দক্ষিণের এই রাজ্যে সাক্ষরতার হার দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, তার মানে সাক্ষর হলেই কাউকে শিক্ষিত বলা যায় না। আবার কেরলের শাসক দল বাম নেতৃত্ব আশঙ্কা করছেন, এই ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ খুঁজছে গেরুয়া শিবির।
সার্বিক এই প্রেক্ষাপটেই এদিন দীর্ঘ টুইট করেন পিনারাই। তিনি বলেন, “পালাক্কাড় জেলায় একটা দুঃখজনক ব্যাপার ঘটে গিয়েছে। একটি অন্তঃস্বত্তা হস্তিনী প্রাণ হারিয়েছে। আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। আপনাদের উদ্বেগ বৃথা যাবে না।” বিজয়ন জানান, “তদন্ত চলছে। তিন সন্দেহভাজনকে নজরে রাখা হয়েছে। পুলিশ আর বনবিভাগ যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছে। যেখানে ওই হস্তিনী মারা গিয়েছিল সেখানে জেলা পুলিশের কর্তা ও বনবিভাগের কর্তা গিয়েছিলেন। অপরাধীদের ধরার জন্য আমরা সবরকম চেষ্টা করছি।”
In a tragic incident in Palakkad dist, a pregnant elephant has lost its life. Many of you have reached out to us. We want to assure you that your concerns will not go in vain. Justice will prevail.
— Pinarayi Vijayan (@vijayanpinarayi) June 4, 2020

এখানেই থামেননি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বোঝাতে চেয়েছেন বিষয়টিকে কেবল একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসাবে দেখলে চলবে না। তাঁর কথায়, “বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের এই সংঘাতের পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানেরও আমরা চেষ্টা করব। হতে পারে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় মানুষ এবং বন্য প্রাণীর উপরে প্রভাব পড়ছে।”
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক ফরেস্ট অফিসার সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত হস্তিনীর ছবি পোস্ট করেছিলেন। তাতে দেখা যায়, নদীতে হাতির দেহ ভাসছে। জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহের বুধবার ওই হস্তিনী সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে কাছে একটি গ্রামে চলে আসে। সেখানে সে বাজি ভর্তি একটি আনারস খেয়ে ফেলে। বাজিগুলি তার মুখের মধ্যে ফেটে যায়। হস্তিনীটি প্রবল যন্ত্রণায় কয়েকদিন জঙ্গলে ঘুরতে থাকে। তারপর ২৭ মে নদীতে নেমে মৃত্যুবরণ করে।
বৃহস্পতিবার তা নিয়ে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও টুইট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারও এই ঘটনার তদন্ত করছে। তিনি লিখেছেন, “হাতিকে হত্যার ঘটনাটি কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আমরা অপরাধীদের ধরার জন্য সবরকম চেষ্টা করব। পশুটিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী।”
Having said that, we are saddened by the fact some have used this tragedy to unleash a hate campaign. Lies built upon inaccurate descriptions and half truths were employed to obliterate the truth. Some even tried to import bigotry into the narrative. Wrong priorities.
— Pinarayi Vijayan (@vijayanpinarayi) June 4, 2020
আবার বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের অনেক নেতা এ ঘটনায় কেরল সরকারের সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই এদিন পিনারাই বলেছেন, “দুঃখজনক হল, এ ঘটনা নিয়েও অনেকে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর কথা রটিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ এর সঙ্গে আবার ধর্মান্ধতাকে জুড়ে দিতে চাইছে। যা ঠিক নয়”। তাঁর কথায়, কেরল বরাবরই ন্যায় বিচারের পক্ষে কথা বলেছে। এ বারও তার অন্যথা হবে না।