
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুধবার রাত থেকে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় হুহু করে ছড়াতে শুরু করেছিল। যাতে দেখা গিয়েছে, একটি শ্মশান থেকে আধপোড়া মৃতদেহ আংটা দিয়ে টেনে কলকাতা কর্পোরেশন লেখা একটি গাড়িতে তোলা হচ্ছে। দ্য ওয়াল সেই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি। তা ছাড়া এদিন বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশও কিছু বলেনি।
তবে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র দফতরের জবাব চেয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেইসঙ্গে টুইট করে এই ঘটনাকে চূড়ান্ত অমানবিক বলে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের থেকে গোটা ঘটনার আপডেট জানতে চেয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “আমাদের সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে মৃতদেহ সৎকার করা হয়। এটাই ঐতিহ্য।” রাজ্যপাল এও লিখেছেন, ওই শিউরে ওঠার মতো ভিডিওটি তিনি ইচ্ছে করেই টুইট করেননি। কারণ সেটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
পরে সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে রাজ্যপাল ফের টুইট করেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের গাফিলতি হয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মৃতদেহ সৎকারের ব্যাপারটা ঠিকমতো করা হবে।
গতকাল থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, যে আধাপোড়া মৃতদেহগুলি শ্মশানের ভিতর থেকে বাইরে এনে গাড়িতে তোলা হচ্ছে সেগুলি কাদের? তাঁরা কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন? অনেকে এই প্রশ্নও তোলেন, পরিবারের লোক মৃতদেহ দাবি না করলে প্রশাসন তা সৎকার করতে পারে। কিন্তু দেহগুলি আধপোড়া অবস্থায় চুল্লির বাইরে আনা হচ্ছিল কেন?
ওই ভিডিওর সঙ্গে আরও কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুর্গন্ধের কারণে শ্মশানের মূল গেটের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আশপাশের মানুষজন। এবং সমস্ত ফুটেজই দিনের আলোর। যদিও কোনও ফুটেজেরই সত্যতা দ্য ওয়াল যাচাই করে দেখেনি।
গোটা ঘটনা কী হয়েছে তা জানতে চেয়ে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি দিয়েছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, বাম জমানায় মাওবাদীদের দেহ পুলিশ যখন বাঁশে বেঁধে আনত, তখন কতই না সমালোচনা করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে এখন কী হচ্ছে!
আবার কেউ কেউ হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয় যে, এই মৃতদেহগুলি এনআরএসে ভর্তি থাকা করোনা আক্রান্তদের। এই অবস্থায় এনআরএস কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ১৪টি বেওয়ারিশ লাশ তারা কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তর করেছিল। তবে তাঁরা কেউ কোভিড পজিটিভ ছিলেন না। এর মধ্যে ২৯ তারিখ জারি করা কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে যেহেতু ধাপার মাঠে কোভিডে মৃতদের সৎকার হচ্ছে তাই যে মৃতদেহগুলি পরিবারের লোক নিয়ে যায়নি (করোনা আক্রান্ত ছিলেন না) সেগুলি আদি গড়িয়া শ্মশানে দাহ হবে।
এনআরএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশ কমিশনারকেও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। একই দাবি করে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছেন, ঘটনাটি ভিডিও করে ভুয়ো ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা নিয়ম মেনেই থানাকে জানিয়ে পুরসভায় দিয়েছিলেন দেহগুলি। এর সঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক নেই।