
অশ্লীলতার এই বাড়াবাড়ির জন্য অভিভাবকরাও কি দায়ী নন?
ব্যাপারটা ছোঁয়াচে রোগের মতোই ছড়াচ্ছে। প্রথমে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর মালদহের স্কুলে। তারপর বারাসতের স্কুলে। ছেলেমেয়েরা বুকে-পিঠে অশ্লীল শব্দ লিখে, কখনও বা গান গেয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তোলা ছবিতে দেখা যায়, গুটিকতক ছেলেমেয়ে রবীন্দ্রনাথের গানে অশ্লীল শব্দ বসিয়ে নিজেদের পিঠে ও বুকে গেঞ্জির ওপরে লিখে রেখেছে। বারাসতের স্কুলে তোলা ভিডিওয় দেখা যায়, ছেলেরা ক্লাসরুমে বসে রবীন্দ্রসংগীতে অশ্লীল শব্দ বসিয়ে গাইছে। মালদহের স্কুলেও কয়েকটি উঁচু ক্লাসের মেয়েকে ভিডিও ক্যামেরার সামনে অশ্লীল শব্দ বলতে দেখা গিয়েছে।
ছেলেমেয়েদের কীর্তি দেখে আঘাত পেয়েছেন অনেকে। পাওয়াই স্বাভাবিক। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় শিক্ষালাভের জন্য। সেখানে তারা অপভাষা প্রয়োগ করতে শিখবে, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে বিকৃত করবে, এমনটা কখনই কাম্য নয়।
ছাত্রদের মধ্যে অপভাষা-গালমন্দের প্রচলন চিরকালই আছে। ছেলেরা প্রাথমিকের গণ্ডি ডিঙিয়ে ওই শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত হয়। কথা বলার সময় জায়গামতো শব্দগুলি প্রয়োগ করতে শেখে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের আড্ডায় অবাধে শব্দগুলি প্রয়োগ করা হয়। আগে মেয়েদের মধ্যে অপভাষার চল ছিল কম। এখন তাও হয়েছে।
আগে এই ভাষাগুলি প্রয়োগ করা হত একান্তে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটা এসে পড়েছে প্রকাশ্যে। টিন এজারদের সব কিছুতেই বাহাদুরী নেওয়ার প্রবণতা থাকে। অশ্লীল শব্দ লিখে বা গান গেয়েও অনেকে বাহাদুরী নেওয়ার, হিরো হওয়ার চেষ্টা করেছে। রবীন্দ্রনাথের গানে অশ্লীল শব্দ বসানোর মধ্যে যে অপরাধজনক কিছু আছে, সেই বোধটাই তাদের নেই।
এই বোধটা হারিয়ে গেল কীভাবে?
মনস্তাত্ত্বিকরা বলেন, গালাগালি দেওয়া আসলে হতাশার প্রকাশ। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছে। চাকরিবাকরি নেই, অর্থনীতির বিকাশের হার তলানিতে, অপরাধীরা জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে পালিয়েছে, অপরাধপ্রবণ দাঙ্গাহাঙ্গামা করে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে, এই অবস্থায় অনেকে হতাশ হবেই। তা থেকে যেমন অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, তেমনই বেড়ে চলেছে অপভাষা প্রয়োগের অভ্যাস।
এখন রাস্তাঘাটে বেরোলেই নানা অকথা-কুকথা শোনা যায়। বয়স্করাও আজকাল কথায় কথায় অশালীন শব্দ প্রয়োগ করেন। তাঁদের দেখে ছোট ছেলেমেয়েরাও যে শিখবে তাতে আশ্চর্য কী।
এর ওপরে আছেন রাজনীতিকরা। এখনকার দিনে তাঁদের মুখে যত অকথা-কুকথা শোনা যায়, পাঁচ বছর আগেও তত শোনা যেত কিনা সন্দেহ। খোদ মন্ত্রী-সান্ত্রীরাই যদি বিপক্ষের বিরুদ্ধে যুক্তির বদলে গালি প্রয়োগ করেন, তাহলে ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?
কয়েকটি শিক্ষায়তনে ছেলেমেয়েরা যা করেছে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে এই প্রবণতা দূর করা যাবে না। সমাজের যাঁরা অভিভাবক, তাঁরা নিজেরা আগে ভদ্রতা ও শালীনতা শিক্ষা করুন। তবে কমবয়সীরা গালাগালি দিয়ে বাহাদুরী নেওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত হবে।