
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিঙ্গুর নিয়ে দিদিকে কটাক্ষ করতে গিয়ে ক’দিন আগে অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, শিল্প বন্ধ করে কীভাবে নটে শাক চাষ করতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন! এমন আজব রাজ্য কোথাও পাবেন!
মঙ্গলবার সেই সিঙ্গুরের অনতিদূরে সভা করে দিলীপ ঘোষ একই ব্যাপারে খোঁচা দিতে চাইলেন শাসক দলকে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বলেন, “আচ্ছা বলুন তো, দিদিমণিকে মেলা, খেলা, উৎসব উদ্বোধন করতে আপনারা দেখেছেন। গত দশ বছরে কোনও কারখানা উদ্বোধন করতে দেখেছেন?” তাঁর কথায়, “যদি সিঙ্গুরের জমির দিকে তাকাই, দিদিমণির শাড়ির মতো মনে হয়, সাদা কাশফুলে ঢেকে রয়েছে!”
উনিশের লোকসভা ভোটে এই সিঙ্গুরে জিতেছে বিজেপি। একদা উর্বর এই জমিতে না হয়েছে শিল্প, না ভাল করে হচ্ছে চাষ! অনেকের মতে, বাংলায় শিল্পায়নের কফিনে শেষ পেরেকের মতো স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিঙ্গুর।
বিরোধীরা এ ব্যাপারে খোঁচা দেবেন সেটাই রাজনীতিতে দস্তুর। তবে এদিন শুধু খোঁচা দেওয়া যেন উদ্দেশ্য ছিল না রাজ্য বিজেপি সভাপতির। তিনি এক প্রকার বিকল্প মডেল দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় শিল্প স্থাপন সহজ করার কথাও বলেছেন।

হুগলির তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব অবশ্য প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “সিঙ্গুরের কৃষকদের অধিকারের জন্য লড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দেশ তাঁর সেই আন্দোলনের প্রশংসা করেছিল”। দল যে জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তাও ফের তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।
তবে বর্তমান সরকারের সেই নীতি যে শিল্পায়নের পথে অন্তরায় সে ব্যাপারে শিল্প ও বণিক মহলের একাংশের জোরালো বক্তব্য রয়েছে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম জমানায় সাংসদ সৌগত রায় ছিলেন শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান। কিন্তু সেই পদে মাত্র ২ বছর থাকার পর তিনি ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল যে, জমি নীতি মতান্তরের কারণেই ইস্তফা দিয়েছিলেন সৌগতবাবু। কারণ, তিনিও মনে করতেন সরকারের জমি নীতি শিল্পায়নের পথে বড় বাধা।
https://www.facebook.com/TheWallBangla/posts/481605092413485
এদিন চন্দননগরের সভায় দিলীপবাবু আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলে বেড়ান তাঁর সরকার রাজ্যের ৮০ শতাংশ লোককে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেয়। কিন্তু আমি বলব উনি ৮০ শতাংশ লোককে ভিখারি করেছেন। কেন বাংলার মানুষ ২ টাকা কেজির চাল খাবে? কেন তারা কাজের সুযোগ পাবে না? কেন তাদের রোজগার বাড়বে না? কেন তারা আরও ভাল খেয়ে পড়ে থাকবে না? বাংলা ছেড়ে কেন তাদের মুম্বই, সুরাতে কাজ খুঁজতে যেতে হবে।
বস্তুত উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস দিয়ে কেন্দ্রে মোদী সরকার যেমন একটা উপভোক্তা শ্রেণি তৈরি করতে চাইছে। তেমনই বাংলায় তৃণমূল সরকারও রেশনে ২ টাকা কেজি চাল দিয়ে একটা উপভোক্তা শ্রেণি তৈরি করতে চেয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, কৌশলে দিলীপবাবুরা সেই জায়গাতেই আঘাত হানতে চাইছেন। তাঁরা মানুষের স্বাভিমানকে খুঁচিয়ে তুলে স্বপ্ন দেখাতে চাইছেন। প্রান্তিক মানুষের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছেন, রাজার ঘরে যে ধন রয়েছে, আমার ঘরেও তা থাকবে না কেন? কেন রেশনের ২ টাকা চাল খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে!