
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক সময়ে প্রমোদ মহাজন আকছার বলতেন, রাজনীতিকদের অরাজনৈতিক কর্মসূচি বলে কিছু হয় না।
কেন? প্রমোদের যুক্তি ছিল, রক্তদান শিবিরে গেলেও তো এই বার্তা তাঁরা দেন যে ‘আমি মানুষের সঙ্গে আছি’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর আজ রবিবার মহিষাদলে প্রথম সভা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নিজে বলেছেন, অরাজনৈতিক সভা। কিন্তু প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের কথার প্রসঙ্গ টেনেই বলতে হয়, রাজনীতির বার্তা কি ছিল না! অনেকেই বলছেন, দিব্যি ছিল।
মহিষাদলের মঞ্চ অন্তত দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে। শুভেন্দু যেন বোঝাতে চেয়েছেন, বাঙালি অস্মিতা ও আবেগ নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কতটা যত্নশীল। এবং দুই, শুধু ভোটের মুখে জাতীয়তাবাদের কথা বলা তাঁর স্বভাব নয়, সারা বছর ধরে তিনি তা ধর্মের মতোই পালন করেন।
কীভাবে?
তা হলে শুনুন। এদিন শুভেন্দুর উদ্যোগে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী রণজিত্ কুমার বয়ালের স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়েছিল। তাম্রলিপ্ত জনকল্যাণ সমিতির ব্যানারে সেই সভায় বিপুল জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। তা ছাড়া প্রয়াত রণজিৎ বয়ালকে নিয়ে মহিষাদলের খুবই আবেগ রয়েছে।
সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে এদিন শুভেন্দু জানান, প্রয়াত রণজিত্ কুমার বয়ালই তাঁকে বলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল ধারা, অজয় মুখোপাধ্যায় এবং সতীশ সামন্তের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে। সেই কথা তিনি রেখেছেন। তেরো সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে তাঁদের মূর্তি উন্মোচন করিয়েছেন।
সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী বোঝাতে চান, তাম্রলিপ্তের মাটি সংগ্রামের মাটি। তাঁর কথায়, “১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ‘৪২-এ তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। দেশের মোট তিন জায়গায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সমান্তরাল সরকার গঠন হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের বালিয়া, মহারাষ্ট্রের সাঁতরা এবং বাংলার তাম্রলিপ্ত।” তার পর সংবিধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাবা সাহেব আম্বেদকর, মৌলানা আজাদরা যে সংবিধান তৈরি করেছিলেন তার মূল কথাই ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল। যে কোনও সংস্থার ক্ষেত্রেই জনগণ শেষ কথা বলে। জনগণের সেই ঢেউকে সামনে রেখে আমার যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তা থেকেই বাংলা বাঙালির একজন সেবক হিসেবে কাজ করে যাব।” সেই সঙ্গে এও বলেন, “আজ যে ভাবে আপনারা এসেছেন তাতে আমি অভিভূত। আগামী দিনের সংগ্রাম এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে চরৈবেতি মন্ত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা।”
এমনিতেই প্রতি বছর নিয়ম করে ৩ ডিসেম্বর শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিবস, ১৫ ডিসেম্বর সর্বাধিনায়কের জন্মদিবস, ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেন শুভেন্দু। তা ছাড়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন নিষ্ঠার সঙ্গেই করেন। মেদিনীপুর জেলা জুড়ে ওই দিনগুলোতে একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তিনি। এ বারও ওই দিনগুলোয় তিনি রাস্তায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বাঙালি অস্মিতা বা জাতীয়তাবাদের বিষয়গুলি রাজনৈতিক ভাবে কেন প্রাসঙ্গিক?
তা প্রাসঙ্গিক এই কারণেই যে ভোট-মুখে বাঙালি স্বাভিমানের অস্ত্রে শান দিতে চাইছে শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের রিপোর্ট জনসমক্ষে আনতে হবে এবং ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে। তা ছাড়া ধারাবাহিক সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে তৃণমূল মুখপাত্ররা বার্তা দিতে চাইছেন বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বর্তমান সরকার কতটা যত্নশীল।
তা হলে? সেই প্রেক্ষাপটে শুভেন্দুর এদিনের সভার কি তাৎপর্য নেই? শুভেন্দুর এই অরাজনৈতিক সভায় রাজনীতির বার্তা একেবারেই ছিল না বলা যায় কি!