
দ্য ওয়াল ব্যুরো : গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে প্রতিটি ঋণদাতা সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল, সুদের ওপরে সুদ বাবদ যাঁরা অর্থ জমা দিয়েছেন, তাঁদের যেন ৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সেইমতো এদিন টাকা ফেরত দিতে শুরু করল ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সংস্থা। যাঁরা দু’কোটি টাকার কম ঋণ নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে লকডাউনের ছয় মাসের জন্য মরেটোরিয়াম ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মরেটোরিয়াম প্রকল্পের মধ্যে ছিল আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণ, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া, গাড়ি কেনার ঋণ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের ঋণ এবং ভোগ্যপণ্য কেনার ঋণ। কৃষি ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য ঋণ এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
গত ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয়, অতিমহামারীর প্রেক্ষিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণে সুদ মকুব প্রকল্প কার্যকর করতে হবে। বিচারকরা মন্তব্য করেন, সাধারণ মানুষ দেওয়ালি পালন করতে পারবে কিনা, তা নির্ভর করছে সরকারের ওপরে। এই নির্দেশের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রক অপারেশনাল গাইডলাইনস প্রকাশ করে ২৩ অক্টোবর।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই কর্মহানি হতে শুরু করে। ফলে যাঁরা চাকরিজীবী এবং বাড়ি, গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ কেনার জন্য ঋণ নিয়েছেন, প্রশ্ন ওঠে তাঁরা মাইনে ঠিকমতো না পেলে কীভাবে ইএমআই তথা মাসিক সহজ কিস্তির টাকা ব্যাঙ্ককে ফেরত দেবেন? ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তারা ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায়। এই সংস্থাগুলিও তো প্রায় বেশিরভাগই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। তাই ব্যাঙ্ককে কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে তারাও বিপদে পড়ে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিল, তারা চাইলে ঋণ গ্রহীতাদের ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মরেটোরিয়াম দিতে পারে। পরে সেই মেয়াদ ৩১ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরামর্শ শুনে সব ব্যাঙ্কই জানায় তারা গ্রাহকদের মরেটোরিয়াম দিতে আগ্রহী। তবে গ্রাহক স্থির করবে তারা মরেটোরিয়ামের সুবিধা নেবে কিনা। সবথেকে বড় বিষয় হল, ৩ মাস বা ৬ মাস ইএমআই না দিলে সুদ বকেয়া হচ্ছে। সেই বকেয়া সুদের উপর কিন্তু চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ জমা দিতে হবে। সেই সুদ আসলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আখেরে ঋণ পরিশোধ করার মেয়াদ আরও এক বছর বা তার বেশি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ গ্রাহকদের আরও বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ধরা যাক, কোন ঋণ গ্রহীতাকে গৃহ ঋণ বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা ইএমআই বা কিস্তি দিতে হয় ব্যাঙ্ককে। এর মধ্যে আসলের অংশ তিনি ফেরত দেন ১২ হাজার টাকা। ১৮ হাজার টাকা হল আসলের উপর সুদের কিস্তি। অর্থাৎ ৩ মাস ইএমআই না দিলে সুদ বকেয়া হচ্ছে ১৮ X ৩ = ৫৪ হাজার টাকা। ব্যাঙ্কগুলি বলে এর উপরে চক্রবৃদ্ধি হারে কিন্তু সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। একেই বলা হচ্ছে ‘সুদের উপর সুদ’ তথা ইন্টারেস্ট অন ইন্টারেস্ট।
ব্যাঙ্কগুলোর এই ঘোষণা শুনে মাথায় হাত পড়ে গ্রাহকদের। অনেকেই বলতে, শুরু করেন এতো সুবিধার থেকে অসুবিধা হল বেশি। এর চেয়ে বরং ধার দেনা করে বাটি ঘটি বেচে হলেও কিস্তির টাকা দেওয়া ভাল। বহু বেসরকারি ব্যাঙ্কও ইনিয়ে বিনিয়ে গ্রাহকদের সে কথা বোঝাতে থাকে। কারণ, তারা মনে করে কিস্তির টাকা ভালয় ভালয় উদ্ধার হলে মঙ্গল। নইলে ব্যাঙ্কের বড় ক্ষতি হবে।
কিন্তু ব্যাঙ্কগুলির এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। তাতে বলা হয়, তা হলে এই সংকটের পরিস্থিতিতে মানুষ কী সুরাহা পেল? সুপ্রিম কোর্ট তখন সরকারের উপর চাপ দেয়। অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলে। শেষমেশ সরকার ঠিক করেছে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সুদের উপর সুদ দিতে হবে না গ্রাহকদের।