
দ্য ওয়াল ব্যুরো: “লেনিন সে বার শীতকালে, ভালবেসে ফুল জীবন্ত, আনলেন মরা দিনকালে, তোমারই জন্য বসন্ত ।”
গান লিখেছিলেন কবীর সুমন। পরে তৃণমূলের সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু একুশের এই শীতকালে খড়গপুরের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার নয়া নজির তৈরি করলেন। তৃণমূল চালিত পৌরসভার উদ্যোগে বসানো হল লেনিন মূর্তি। লেনিন গার্ডেনে বসানো হয় মূর্তি। রুশ বিপ্লবের পুরোধা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মূর্তি উন্মোচন করলেন খড়গপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে।
হঠাত্ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট নেতার মূর্তি উন্মোচন?
প্রদীপবাবুর জবাব, লেনিন নির্দিষ্ট দলের নন। সারা দুনিয়ার মেহনতী মানুষের প্রেরণা। তাঁর কথায়, “আমাদের সরকার সবসময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে। আমরা রাজনীতি দূরে রেখে কাজ করতে চাই। পৌরসভার উদ্যোগে আমরা লেনিনের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলাম। মূর্তির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে খড়্গপুরের মানুষকে যেমন ডেকেছি, তেমনই খড়গপুরের সমস্ত বামপন্থী মানুষ যারা লেনিনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতি করেন, তাঁদেরও আমরা ডেকেছি। খড়গপুর থেকে আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে যাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের বাম নেতা অনিল দাস বলেন, “সৌজন্য দেখে ভাল লাগছে। তবে সারা রাজ্যেই এটা হওয়া উচিত।”
যদিও বিজেপির সহ সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্যর বক্তব্য, বামেদের নিয়ে ভোটের বৈতরণী পার হতেই তৃণমূল বিধায়কের এই কৌশল। কিন্তু এসবে লাভ হবে না। লেনিনের মূর্তি খড়গপুরে তৃণমূলকে জেতাতে পারবে না।
ষোলর ভোটে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জ্ঞান সিং সোহনপালকে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু দিলীপবাবু সাংসদ হওয়ার পরে উপনির্বাচন হয় রেল শহরে। তাতে বিজেপির ৪৫ হাজারের ব্যবধান মুছে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। কিন্তু সেই জয়ের কাণ্ডারী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখন তিনি বিজেপি নেতা।
তবে এই লেনিন মূর্তি নিয়ে কম চাপানউতোর বাংলায় হয়নি। তৃণমূল ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর গড়বেতায় লেনিন মূর্তি ভেঙেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই পশ্চিম মেদিনীপুরেই এবার লেনিন মূর্তি সৌজন্যের নজির তৈরি করল।
পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা ভোটে বামেদের ভোট উজাড় করে গিয়ে পড়েছিল বিজেপির বাক্সে। একদিকে গেরুয়া শিবির চাইছে তা ধরে রাখতে। শুভেন্দু অধিকারীও বলছেন, লাল ঝাণ্ডা নিয়ে মিছিলে যাচ্ছেন যান কিন্তু ভোট দিন পদ্মফুলে। তাহলেই পঞ্চায়েত, পুরসভায় প্রার্থী দিতে পারবেন। আবার তৃণমূল চায় বামেদের ভোট বামেদের কাছে ফিরলেই বিজেপির যাত্রা ভঙ্গ হবে।