
শারীরিক ফিটনেস ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে কোয়ারেন্টাইন
ঘাম ঝরিয়ে কার্ডিও এক্সারসাইজ় করাই হোক, বা শরীরের শেপ ফেরানোর জন্য পেট-হাত-পায়ের ব্যায়ামই হোক-- সবটাই অতি সহজে ও অনায়াসে আপনি বাড়িতেই করতে পারবেন।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সময় পাই না। এই শব্দটা আপনি কত ক্ষেত্রেই না ব্যবহার করেছেন এত দিন। সবচেয়ে বেশি বোধহয় করেছেন, নিজের যত্ন নেওয়ার প্রসঙ্গে। অফিস-বাড়ি করতে করতে, আরও নানা রকম সমস্যায় ছুটতে ছুটতে, দিনের শেষে আপনার হয়তো বারবার মনে হয়েছে, একটু সময় পেলে শরীরচর্চা করা যেত।
সময়ের অভাবে অর্ডার করে আনানো খাবার খেয়ে ফেলার পরে নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভেবেছেন, একটু ব্যায়াম করার সময় পেলেই হয়তো শেপে ফিরতে পারতেন আগের মতো। শুধু কি শেপ? আপনার শারীরিক সমস্যাগুলোর জন্য তো চিকিৎসক বারবারই বলেছেন, একটু শরীরচর্চা জরুরি। সকাল সকাল শুরুও করেছিলেন হাঁটতে, কিন্তু তার পরেই লকডাউন। ঘরে আবদ্ধ থাকা শুরু।
কিন্তু আপনি কি জানেন, এই কোয়ারেন্টাইন জীবনই শরীরচর্চা করার বা নিজেকে সুস্থ ও ফিট করে তোলার আদর্শ সময় হয়ে উঠতে পারে? ঘাম ঝরিয়ে কার্ডিও এক্সারসাইজ় করাই হোক, বা শরীরের শেপ ফেরানোর জন্য পেট-হাত-পায়ের ব্যায়ামই হোক– সবটাই অতি সহজে ও অনায়াসে আপনি বাড়িতেই করতে পারবেন। দরকার শুধু মনের ইচ্ছে আর শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়ার আগ্রহ। আপনি যদি জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী না হন, তাহলে সময় তো আপনার হাতেই আছে এখন।
শুরু করুন
অনভ্যস্ত শরীরে যদি ব্যায়াম শুরু করেন, চোট-আঘাত লাগার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তাই মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত প্রতিটি জয়েন্ট একটু নাড়াচাড়া করে নেওয়া ভাল। ঘাড় ঘোরান ক্লকওয়াইজ ও অ্যান্টিক্লকওয়াইজ। ঘোরান কাঁধের জয়েন্ট, কনুই, কবজি। কোমর মুভ করুন গোল করে। হাঁটু, গোড়ালির জয়েন্ট ঘুরিয়ে নিন। পা টানটান করে স্ট্রেচ করে নিন। চাপ দেবেন না বেশি।
ওয়ার্ম আপ
যে কোনও ব্যায়াম শুরু করার আগেই এই পর্ব খুব জরুরি। গা ঘামিয়ে না নিয়ে, শরীরের পেশিগুলো একটু সচল করে না নিয়ে দুম করে এক্সারসাইজ় শুরু করলে চোট লাগতে পারে যে কোনও সময়। তাই প্রথমে একটু গা ঘামিয়ে নেওয়া জরুরি।
কী করতে পারেন?
স্পট জগিং: সবচেয়ে সহজ এবং পরিচিত। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জগ করুন। প্রথমে আস্তে, তার পরে একটু জোরে, কয়েক সেকেন্ড খুব জোরে, তার পরে আবার আস্তে। যেমন পারেন, যতটা পারেন।
স্টেপিং: ঘরের ভিতরে সিঁড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকলে কয়েকটা স্টেপ বারবার দ্রুত ওঠা-নামা করতে পারেন। একটু পরেই ঘাম ঝরবে।
জাম্পিং জ্যাক: খুবই মজার ছন্দে নিজেকে ঘামিয়ে ফেলতে পারেন। একটা করে জাম্পে পা ফাঁক করে হাত মাথার ওপর তুলে তালি দিয়েই ফের জাম্প করে স্ট্যান্ডিং পোজিশনে ফেরা। ৫০ বার করুন, আস্তে আস্তে বাড়িয়ে ১০০ বার। এতে নিছক ওয়ার্ম আপ নয়, কার্ডিও এক্সারসাইজও হয়ে যাবে আপনার।
স্কিপিং: প্রথমে ৫০টা দিয়েই শুরু করুন না। তার পরে বাড়ান আস্তে আস্তে। দিব্যি ঘাম ঝরবে।
আপার বডি এক্সারসাইজ়
পুশ আপ: শুরু করতে পারেন পাঁচটা করে তিনটে সেট দিয়ে শুরু করুন, ২১ দিনের শেষে ১০টা করে পাঁচটা সেট করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস। বেশি কষ্ট হলে, হাঁটু মাটিতে রেখে, পা তুলে রাখুন। বুকের দু’পাশে হাত রেখে চেস্ট নামান যতটা পারেন।
বাইসেপ কার্লস, ট্রাইসেপ কার্লস: ডাম্বেল না থাকলে সঙ্গী হোক দু’লিটারের জলভর্তি বোতল।
চিন আপ: জায়গা নেই। তাই দুপাশে দুটো চেয়ার রেখে, পোক্ত রড রেখে দিন মাঝে। নীচে শুয়ে, রড ধরে চিন আপ করুন। সহজও হবে, কাজও হবে।
অ্যাবডোমেন
সিট আপ: এই ব্যায়ামের বিকল্প নেই পেটের যত্ন নিতে। তবে এই সিট আপই করতে পারেন তিন ভাবে। প্রথম সেটে হিপ থেকে হাঁটু এবং হাঁটু থেকে গোড়ালি ৯০ ডিগ্রি করে উঁচু করুন মাটিতে শুয়েই। এবার সিট আপ করুন। ১০টা দিয়ে শুরু করুন না। আস্তে আস্তে বাড়াবেন। এর পরে একই সিট আপ হবে, হাঁটু থেকে পা ভাঁজ করে মাটিতে রেখে। লাস্ট সেট হবে পা টানটান করে মাটিতে লম্বা করে, কিন্তু মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে তুলে রেখে।
লোয়ার বডি: স্কোয়াট আর ল্যাঞ্জেস করতে পারলে, সুঠাম পা পাওয়া আটকাবে না। ১০টা স্কোয়াট শুরু করতে পারেন। পা ঠিক পশ্চারে রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিন সেটই হোক প্রথম দিন, আস্তে আস্তে বাড়বে। ল্যাঞ্জেস করার জন্য করিডর থাকলে ভাল, নইলে স্পটে দাঁড়িয়েও হতে পারে। একটা পা পেছনে টান করে মেলে, অন্য পা সামনে ভাঁজ করে মাটির দিকে পুরো বডিটা নামান।
স্ট্রেচিং
ব্যায়াম শেষে স্ট্রেচ করা খুব জরুরি। হাত, পা, কোমর– সমস্ত অঙ্গ টানটান করে স্ট্রেচ করুন। যতটা পারছেন ততটাই। জোর-জবরদস্তি নয় কিন্তু।
কুলডাউন
অন্তত পাঁচ মিনিট চুপ করে চিৎ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে বড় বড় শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। আরাম পাবেন। শরীরের জন্যও জরুরি।
জরুরি বিষয়
১) ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে উঠে একসঙ্গে দল বেঁধে এক্সারসাইজ় করবেন না। বাড়ির সকলে মিলে একসঙ্গে করলেও পর্যাপ্ত দূরত্ব মেনটেন করবেন।
২) যে কোনও এক্সারসাইজ়ের পশ্চার বোঝার জন্য সার্টিফায়েড ট্রেনারদের ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন। এরকম কেউ চেনা থাকলে, ভিডিও কল করেও বুঝে নিতে পারেন। কিন্তু কোনও খুঁত থাকলে তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
৩) শারীরিক কোনও সমস্যা থাকলে, হাড়ের অসুখ বা হৃদরোগ এইজাতীয়, তাহলে ভারী এক্সারসাইজ এড়িয়ে চলবেন। এছাড়াও এক্সারসাইজ করতে গিয়ে কোনও অসুবিধা বোধ করলে, তা কনটিনিউ করবেন না।
৪) ঘরের ভিতরে বা বারান্দায় বা ছাদে– যেখানেই এক্সারসাইজ করুন না কেন, পায়ে জুতো পরতে ভুলবেন না। সঙ্গে জরুরি স্বচ্ছন্দ পোশাক। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্পোর্টস ব্রা ছাড়া ভারী এক্সারসাইজ় না করাই ভাল, সেটা ঘরের ভিতরে হলেও।
৫) ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা না পেরোলে ব্যায়াম করবেন না। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভাল ঘুম জরুরি।
সুস্থ থাকুন কোয়ারেন্টাইনে। সুস্থতর হয়ে উঠুন কোয়ারেন্টাইন পার করে।