
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সম্ভবত ষোলো সালের ভোট থেকে দিদির একটা কথা পছন্দ হয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের—‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মেপে নেব’!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আগ্রাসন এমনই। আজ নয়, কংগ্রেস রাজনীতিতে হাতেখড়ির পর থেকে বরাবরই আগ্রাসী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি ছেড়ে কথা বলেন না!
শুক্রবার মন্ত্রিসভা তথা সমস্ত সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পর জানা গিয়েছে, বিকেলে কালীঘাটে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিমদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দিদি। আজ শনিবারই দেখা গেল, সকাল হতেই মেদিনীপুরে পৌঁছে গিয়েছেন সুব্রত বক্সী।
কেন?
জানা গিয়েছে, ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুর কলেজ মাঠে জনসভা করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সী এদিন তারই রেইকি করতে গিয়েছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে সুব্রতবাবু এদিন একটি বৈঠক করেন। দিদির সভার জন্য তাঁদের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলেছেন সুব্রতবাবু। দল যাতে অটুট থাকে সে ব্যাপারে তিনি ভোকাল টনিক দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি নাকি বলেছেন, দলের প্রতীকের সঙ্গেই যাতে সবাই থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
একটা সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। পরে তাঁকে ওই জেলার পর্যবেক্ষক পদ থেকে সরিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে। সুব্রত বক্সীকেও এক সময়ে ওই জেলার পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যে খুব সফল হয়েছিলেন এমন নয়। বরং পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে বড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। দলের একটি সূত্রের দাবি, তার পর সুব্রত বক্সীই একবার শুভেন্দুকে বলেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা দেখতে।
সে যাক। সুব্রত বক্সী তথা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের এহেন সক্রিয়তা দেখে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি শুভেন্দুকেও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মেপে নেওয়া শুরু হয়ে গেল। কারণ, মেদিনীপুরে সভা করা মানে শুভেন্দুর ঘরের মাঠে গিয়েই সভা করা।
বস্তুত গত ১০ নভেম্বর শুভেন্দু যখন নন্দীগ্রামে অরাজনৈতিক ব্যানারে সভা করেছিলেন, সেদিনও কার্যত পাল্টা সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। তবে শুভেন্দুর সভার ভিড়ের কাছে ধারে ও ভারে টেকেনি সেই সভা। মেদিনীপুরের প্রস্তাবিত সভার জন্য তাই আঁটঘাঁট বেঁধেই নামতে চায় দল।
অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দুকে নিয়ে তৃণমূল এখন একটু বেকায়দাতেই পড়েছে। কারণ, মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তৃণমূলের কোর কমিটিরও সদস্য তিনি। ফলে শুভেন্দুর ইস্তফার ঘটনা নিয়ে অধীর চৌধুরী, মুকুল রায়, আবদুল মান্নানরা যখন তৃণমূলের সমালোচনায় অবতীর্ণ, তখন খোলাখুলি এই দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারছে না শাসক দলের মুখপাত্ররা।
যাঁকে নিয়ে এতো তোলপাড় সেই শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফার পর এদিন তাঁর কাঁথির বাড়িতেই ছিলেন। জানা গিয়েছে, তাঁর মা গায়েত্রী দেবী খুবই অসুস্থ। বাড়িতেই স্যালাইন চলছে। মায়ের দেখভাল করছেন শুভেন্দু।
তবে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, একটা বিষয় কিন্তু এতে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তা হল, দাদা-র মোকাবিলা তৃণমূলের অন্য কোনও নেতাকে দিয়ে হচ্ছে না। সে জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সভা করতে হচ্ছে মেদিনীপুরে। তার মানে তো পরিষ্কার। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শুভেন্দুর সমতুল ওজনদার আর কোনও নেতা নেই। প্রশ্ন হল, সেই সম্মান কি তৃণমূলে পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী?