
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাতারাতি আমির হওয়া বলতে যা বোঝায়, সেটাই হয়েছিল শেখ নাজিবুল্লার। এই সেদিনও আরামবাগ কলেজ থেকে পাশ করার পর যে ছেলেটা একটা হিরো জেট সাইকেল নিয়ে ঘুরতেন, তাঁর গ্যারাজেই হঠাৎ করে জমতে শুরু করল অডি, বিএমডব্লিউ।
আরামবাগের অ্যাঞ্জেল অ্যাগ্রোটেক সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজিবুল্লাকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে সোমবার। আপাতত তিনি সিবিআই হেফাজতে। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারিতেই যেন সিঁদুরে মেঘ দেখছেন হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার অনেকে।
প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও, অনেকেই আশঙ্কা করছেন নাজিবুল্লার সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি অনেক নেতাকে ডাকাডাকি করতে পারে। সেই তালিকায় নাম থাকতে পারে বেশ কয়েক জন তাবড় জনপ্রতিনিধির।
আরামবাগের বাতানলের বাসিন্দা নাজিবুল্লা। আরামবাগ নেতাজি কলেজের বি কমের ছাত্র ছিলেন। কলেজ থেকে বেরোনোর পরে তিনিই ২০০৯ সালে অর্থলগ্নি সংস্থা শুরু করেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, বাম জমানার শেষ পর্ব থেকেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় নাজিবুল্লার। তারপর উল্কার গতিতে উত্থান। দ্রুত বাড়তে থাকে এলাকা। যেমনটা হয় আর কি!
অ্যাঞ্জেল অ্যাগ্রোটেক সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজিবুল্লা দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগ হল, নাজিবুল্লা ও তাঁর সংস্থার আরও কয়েকজন ডিরেক্টর মিলে বেআইনি ভাবে আমানতকারীদের থেকে প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন। তার পর আমানতকারীদের ঠকিয়ে নাজুবুল্লাহ চম্পট দেন।
জানা যাচ্ছে, ব্যবসা চালাতে নেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে মুড়িমুড়কির মতো টাকা খরচ করত নাজিবুল্লা। জীবনযাত্রাও বদলে যায় তাঁর। নিজেকে সমাজসেবী পরিচয় দিতেন তিনি। আরামবাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে তখন ‘রাহুল রাজ‘ চলছে।
শাসকদলের অনেকে মনে করছেন, সিবিআই যদি সুবিধাভোগীদের টানতে শুরু করে তাহলে অনেকেরই ডাক পড়বে। ভোটের আগে তা নিয়েই শঙ্কিত হুগলির অনেকেই। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলছেন, “সিবিআইকে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিজেপি ব্যবহার করে এটা সবাই জানে। তবে আমরা তাতে ভয় পাচ্ছি না। আর নাজিবুল্লার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্কই নেই।”
লোকসভায় আরামবাগ মহকুমায় ভাল ফল হয়নি তৃণমূলের। সুতোর ব্যবধানে জিতেছেন অপরূপা পোদ্দার। একুশের আগে যদি আবার নতুন করে সিবিআই তলব শুরু হয় তাহলে অনেকের পক্ষে তা অস্বস্তির হবে বলে মনে করা হচ্ছে।