
দ্য ওয়াল ব্যুরো : বিজনেস টাইকুন মেহুল চোকসি, ঝুনঝুনওয়ালা ব্রাদার্স এবং বিজয় মাল্য। মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে ৫০ জন ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছে, তার শীর্ষে আছে তাঁদের নাম। অভিযোগ, তাঁরা জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ককে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছেন। সমাজকর্মী সাকেত গোখলে তথ্য জানার অধিকার আইনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কারা ব্যাঙ্ককে সবচেয়ে বেশি টাকা ফাঁকি দিয়েছেন? তার জবাবে মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই তালিকা প্রকাশ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫০ টি সংস্থার ঋণ মকুব করা হয়েছে। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য, ওই সব সংস্থার ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়েছে। তার অর্থ, যে অর্থ ঋণ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল, তা আদায় করার চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু পাওয়া যায়নি। ওই অর্থ ব্যাঙ্কের ক্ষতি হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে।
ঋণখেলাপিদের তালিকায় সকলের ওপরে আছে হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির নাম। তাঁর কোম্পানি গীতাঞ্জলী জেমসের নামে ৫৪৯২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। চোকসির অপর দু’টি কোম্পানিও ঋণ নিয়েছিল বিপুল পরিমাণে। তার মধ্যে গিলি ইন্ডিয়া ঋণ নিয়েছিল ১৪৪৭ কোটি টাকা। নক্ষত্র ব্র্যান্ডস নিয়েছিল ১১০৯ কোটি টাকা। আরইআই অ্যাগ্রো নামে একটি সংস্থা ৪৩১৪ কোটি ও উইনসাম ডায়মন্ডস কোম্পানি ৪০৭৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।
রোটোম্যাক গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড ঋণ নিয়েছে ২৮৫০ কোটি টাকা। কুডোস কেমি লিমিটেড নিয়েছে ২৩২৬ কোটি। রুচি সয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নিয়েছে ২২১২ কোটি। জুম ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড নিয়েছে ২০১২ কোটি।
ঋণখেলাপিদের তালিকার ন’নম্বরে আছে বিজয় মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন্সের নাম। তার নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৯৪৩ কোটি টাকা। ফর এভার প্রেশ্যাস জুয়েলারি অ্যান্ড ডায়মন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড ঋণ নিয়েছিল ১৯৬২ কোটি। ডেকান ক্রনিকল হোল্ডিং লিমিটেড ঋণ নিয়েছে ১৯১৫ কোটি।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতদের তালিকায় বিজেপির বন্ধুরা, তাই পার্লামেন্টে গোপন করছিল, তোপ রাহুলের
ঝুনঝুনওয়ালা ব্রাদার্সের মালিকানাধীন আরইআই অ্যাগ্রো সম্পর্কে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট। ইডি এবং সিবিআই যৌথভাবে তদন্ত করছে উইনসাম ডায়মন্ডসের মালিকদের বিরুদ্ধে। রোটোম্যাকের মালিক বিক্রম কোঠারি ও তাঁর ছেলে রাহুলকে ২০১৮ সালে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তালিকা প্রকাশের পরেই সরকারকে চড়া সুরে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর বক্তব্য, ওই তালিকায় বিজেপির বন্ধুদের নাম আছে। তাই তারা সংসদে জালিয়াতদের নামগুলি গোপন করছিল।
কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ৫০ জন ঋণখেলাপির ৬৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদী, মেহুল চোকসি ও বিজয় মাল্য।
একইসঙ্গে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে কংগ্রেসের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, যে ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্ককে ঠকিয়েছে, তাদের পালানোর সুযোগ দিয়েছে সরকার। এসব আর মেনে নেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে।