
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় তুলে ধরতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বিশ্ব বাংলা।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেমন কোনও স্লোগান মুখে না বললেও আন্তর্জাতিক আঙিনায় বাংলাকে তুলে ধরার অন্য কৌশল নিয়েছেন যেন! পরপর দুটি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল মিটে দেখা গেল মোদীর ব্যাকড্রপে শোভা পাচ্ছে বাংলার হেরিটেজ।
সপ্তাহ দেড়েক আগে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাকড্রপে ছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দির। আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। এদিন দেখা যায় মোদীর ব্যাকড্রপে শোভা পাচ্ছে কোচবিহার রাজবাড়ি। প্রসঙ্গত, গতকালই কোচবিহারের রাসমেলা মাঠে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়। এদিনের বৈঠকে মোদীর পোশাকেও ছিল খাঁটি বাঙালিয়ানা। পরনে ছিল তসরের পাঞ্জাবি এবং ধুতি। ডান কাঁধ থেকে বুক পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে নেওয়া ছিল একটি সাদা শাল।

গতকাল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস। সেই উপলক্ষ্যেই এই সামিটের আয়োজন করা হয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী ’৭১-এর মুক্তি যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ভারত কী ভাবে দাঁড়িয়েছিল। এদিন সেকথা দরাজ গলায় জানিয়েছেন হাসিনা। বলেছেন, “ভারতই আমাদের প্রকৃত বন্ধু।”
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথের সূচনা করেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। ৫৫ বছর পর চালু হল এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময়ে ফের চমক দেখা যায়। আবহে বেজে ওঠে রবীন্দ্রনাথের লেখা, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যাকড্রপে বাংলার হেরিটেজ রাখা অত্যন্ত সুচিন্তিত। তাঁদের মতে, বাংলার শাসকদল রোজই প্রায় নিয়ম করে বিজেপি নেতাদের বলছেন, ওরা বহিরাগত গুণ্ডা। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ থেকে বাংলা দখল করতে এসেছে। বাংলা কখনও গুজরাতের দাসত্ব করবে না। ইত্যাদি প্রভৃতি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ কথা বলছেন রুটিন করে। ঠিক তখনই পরপর দুটি আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোদীর ব্যাকড্রপে বাংলার হেরিটেজ রাখা তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি।
ইদানিং ত্রিপুরার সঙ্গেও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আসছে ত্রিপুরার সোনামুড়ায়, শিগগিরই শুরু হবে মৈত্রী সেতু। তেমন হলে মোদীর ব্যাকড্রপে ত্রিপুরা রাজবাড়িরও জায়গা হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। কারণ কী তা পরিষ্কার বলেই রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য।
রবীন্দ্র সঙ্গীত বেজে ওঠার মধ্যেও তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সঙ্গীতের শব্দ বদল করা হোক। তাঁর ব্যাখ্যা, জনগণমন-এর যে অংশ জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় তাতে সিন্ধু শব্ধটি রয়েছে। স্বাধীন ভারতে সিন্ধুর কোনও অস্তিত্ব নেই। দেশ ভাগের পর সেটি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে। তাই এ নিয়ে অযথা বিতর্ক হচ্ছে।
এনিয়েও তৃণমূল সুর চড়াতে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে মমতা বলেছিলেন, “এরা রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়ছে না। বলছে জাতীয় সঙ্গীত বদলে পাল্টে দেবে। একবার পাল্টে দেখো না, উল্টে দেব।” হতে পারে সে কারণেই এদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত বেজে উঠল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে।