
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পৃথিবীতে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে বড় আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ থেকে সূর্যের যে শক্তি পৃথিবী অবধি পৌঁছতে পারে না, তাই ধরে বিদ্যুৎ তৈরি করবে সোলার প্যানেল। মহাকাশ থেকে সেই সৌরশক্তি চলে আসবে পৃথিবীতে। অবাক লাগলেও এটাই সত্যিই। এমনই সোলার প্যানেল তৈরি করছে পেন্টাগন।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্ত কাটিয়ে মহাকাশে পৌঁছে দেওয়া হবে সেই সোলার প্যানেল। আকারে বেশি বড় নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বড়সড় পিৎজা বক্সের মতো আয়তন হতে পারে সেই প্যানেলের। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে এক্স-৩৭বি ‘আনম্যানড’ ড্রোন। প্যানেল থেকে এই ড্রোন মারফৎ একটা লুপ তৈরি করা হবে। সে পথেই সৌরশক্তি মহাকাশ থেকে চলে আসবে পৃথিবীতে।
পেন্টাগন এই ড্রোনের নাম দিয়েছে ‘ফোটোভোলটাইক রেডিওফ্রিকুয়েন্সি অ্যান্টেনা মডিউল’ (PRAM)। গত বছর মে মাস থেকে এই সোলার প্যানেলের কাজকর্ম শুরু হয়েছে। এর প্রোটোটাইপ বানিয়ে ট্রায়ালও করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্যানেলে রয়েছে থার্মাল ভ্যাকিউম চেম্বার যা শক্তিকে ধরে রাখতে পারে। ওয়াশিংটনে মার্কিন নৌসেনার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে এই সোলার প্যানেলের পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে।
কীভাবে কাজ করবে এই সোলার প্যানেল? গবেষকরা বলছেন, মহাকাশে সৌরশক্তির সবটুকু পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় না। বিশেষত অতিবেগুনী রশ্মি বা সৌররশ্মির বেশ কিছুটা অংশ পৃথিবীতে ঢোকার আগেই বায়ুমণ্ডলে বাধা পায়। সৌররশ্মির সবটা পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে ভয়ঙ্কর প্রলয় শুরু হতে পারে। ছাড়খাড় হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর সমস্ত রেডিও স্টেশন, নেটওয়ার্ক। সূর্যের ভেতরে যখন প্রলয় ঝড় ওঠে তখন সৌরকণা বা রশ্মিরা দুরন্ত বেগে ছুটে আসে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এই তড়িদাহত কণাগুলোকে বাধা দেয়। গবেষকরা বলছেন, সূর্যের যে রশ্মি পৃথিবীতে ঢুকতে পারে না তাই মহাকাশে ভেসে বেড়ায়। প্রচণ্ড শক্তির সেই রশ্মি বা সৌরআলোকে ধরাই হবে এই সোলার প্যানেলের কাজ।
এই প্রজেক্টের অন্যতম বিজ্ঞানী পল জ্যাফে বলেছেন, সৌরশক্তিকে ধরে সেখান তেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে এই প্যানেলের কাজ। ১২*১২ ইঞ্চির প্যানেল একেক বারে ১০ ওয়াট অবধি এনার্জি ট্রান্সমিশন করতে পারবে। গবেষক বলছেন, আগামী দিনে পৃথিবীতে যে বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে তার অনেকটাই জোগান দিতে পারবে এই সোলার প্যানেল।
‘ফোটোভোলটাইক রেডিওফ্রিকুয়েন্সি অ্যান্টেনা মডিউল’ প্রজেক্টের গবেষক ক্রিস ডেপুমা বলছেন, পৃথিবীর কক্ষপথে বসানো হতে পারে এই সোলার প্যানেলকে। তবে একটা সমস্যাও আছে। পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টায় একবার সূর্যের চারদিকে পাক খায়। কাজেই একটা সময় সেই প্যানেল সূর্যের থেকে দূরে থাকবে। তাই চেষ্টা করা হবে হাই আর্থ অরবিট বা জিওসিনক্রোনাস অরবিটে এই প্যানেলকে বসিয়ে দেওয়ার।
সৌরশক্তিকে ধরে ছোট ছোট রশ্মি তথা মাইক্রোওয়েভ পৃতিবীতে পাঠাবে এই সোলার প্যানেল। এখানেও একটা ব্যাপার আছে। এই ওয়েভ কিন্তু পৃথিবীর যেখানে সেখানে যাবে না। যে নির্দিষ্ট পয়েন্ট সেট করা থাকবে সেখানেই এসে পৌঁছবে এই তরঙ্গ। পৃথিবীতে ঢোকার রকে তার থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। গবেষকরা বলছেন, এই তরঙ্গকে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে পাঠানো যেতে পারে। আরও একটা সুবিধা দিতে পারে এই সোলার প্যানেল, তা হল যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম খবর পাঠাতে পারে। বিশেষত উষ্ণায়ণের কারণে পৃথিবীতে যে জলবায়ু বদল হচ্ছে তার পূর্বাভাস দিতে পারে এই প্যানেল। তার জন্যও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।