
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘পিনপয়েন্ট স্ট্রাইক’ চালিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এমনটাই জানানো হয়েছে সেনার তরফে। সেনা সূত্রে খবর, উরি এবং কেরান সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভূখণ্ডে জঙ্গিদের যে সমস্ত লঞ্চপ্যাড রয়েছে তার অধিকাংশেরই নাম, নিশান মিটিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে একদম সঠিক লক্ষ্যে এই হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। উদ্দেশ্য ছিল নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বারবার পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন এবং জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানোর বিরুদ্ধে যোগ্য জবাব দেওয়া। তবে শুধু জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড নয় সেই সঙ্গে পাকিস্তানি সেনার একাধিক বাঙ্কার, তেলের ডিপো, গোলা-বারুদের ঘাঁটিও ভারতীয় সেনা নষ্ট করে দিয়েছে বলে খবর।
গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর প্রাথমিক ভাবে একটা হইচই শুরু হয়েছিল বটে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে হয়তো গতকাল নতুন করে হামলা চালিয়েছে ভারত। তবে সেনার তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয় যে গতকাল নতুন করে কোনও অভিযান হয়নি। এই হামলা চালানো হয়েছিল গত শুক্রবার। মূলত পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার জন্যই এই অভিযান করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে জম্ম্য-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়েছে। করোনা আবহেও জঙ্গি হামলা একটুও কমেনি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে পাক সেনা। তার পাশাপাশি পাকিস্তানের সরাসরি মদতে সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ চলছে বলেও অভিযোগ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত কয়েক মাসে সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক অস্ত্র বোঝাই ড্রোন। বোঝাই গিয়েছে উপত্যকায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের জন্যই এইসব অস্ত্র পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এছাড়াও গত কয়েক মাসে একাধিক বার জঙ্গিরা নিশানা করেছে নিরাপত্তারক্ষীদের। পাশাপাশি বিজেপি নেতা থেকে আমজনতা জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছেন অনেকেই। শহিদ হয়েছেন অনেকে সেনা জওয়ান। নিহত হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কর্মীরা।
সেনার তরফে জানানো হয়েছে, উপত্যকায় শীত আসছে জাঁকিয়ে। তাই তুষারপাত শুরু হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। এমনিতেও এর আগে সীমান্ত এলাকায় গোপন সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছিল বিএসএফ। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরে ডিজিপি দিলবাগ সিংও একাধিক বার সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, পড়শি দেশের মদতেই এ দেশে জঙ্গি এবং অস্ত্র ঢুকছে।
হালফিলে তেমন নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে গিয়ে একাধিক জঙ্গি মারা যায়। প্রতিশোধ নিতে তার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বারামুল্লা, কেরান, উরি, দাওয়ার, নওগামে জনবসতি লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করে পাক সেনা। ওই হামলায় ভারতের চার সেনা জওয়ান, বিএসএফের এক অফিসার ও চার নাগরিক মারা যান। আহতদের মধ্যে রয়েছে দুই স্কুল পড়ুয়াও। এর পরেই পাল্টা হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনার দাবি, ওই পাল্টা হামলায় অন্তত সাত থেকে আট জন পাক সেনা মারা গিয়েছে। এছাড়া উরি ও কেরান সেক্টরে থাকা একাধিক জঙ্গি লঞ্চপ্যাড নষ্ট হয়ে গিয়েছে।