
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বনলতা সেন থাকতেন নাটোরে। আর সেই নাটোরের মালঞ্চি রেল স্টেশনেই ট্রেনে ওঠার জন্য যাত্রীদের দরকার পড়ে মই। এমনকি মই না পেলে অনেকে হাতল ধরে ওঠার চেষ্টা করেন ট্রেনের ভিতরে। আর তাই ট্রেন এলেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় স্টেশনে। মইয়ে করে ট্রেনে ওঠার জন্য মাথাপিছু ১০ টাকা করেও দিতে হয় তাঁদের।
কিন্তু কেন এই সমস্যা?
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মালঞ্চি রেল স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা জানিয়েছেন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামে না। থামে প্ল্যাটফর্মের বাইরে। আর তাই মই বেয়ে উঠতে হয় তাঁদের। এতে যেমন টাকা খরচ হয়, তেমনই ঝুঁকিও থাকে।
যাত্রীদের আরও অভিযোগ, মালঞ্চি স্টেশনে কোনও টিকিট কাউন্টারও নেই। তাই যাত্রীরা বিনা টিকিটেই ওঠেন ট্রেনে। তার জন্য পরে তাঁদেরই সমস্যা হয়। টিকিট পরীক্ষকের কাছে ধরা পড়ায় জরিমানা দিতে হয় তাঁদের। কিন্তু অনেক বলার পরেও সেখানে কোনও টিকিট কাউন্টার খোলা হয়নি। তাছাড়া স্টেশনে নাকি কোনও কর্মীই নেই। খালি রাতে একজন প্রহরী থাকেন।

মালঞ্চি স্টেশনে নৈশপ্রহরী হিসেবে থাকা আবদুস সালাম জানিয়েছেন, “২০০৩ সাল থেকে এই স্টেশনে কর্মচারী কমতে শুরু করে। ২০০৮ সাল থেকে কোনও কর্মীই নেই। প্ল্যাটফর্মের কাছে থাকা তিনটি লেবেল ক্রসিংয়েও কোনও কর্মী নেই। তাই ট্রেন চলাচলের সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।”
আগে এই মালঞ্চি স্টেশনে ৫টি ট্রেন থামত বলেই জানিয়েছেন আবদুস। কিন্তু বর্তমানে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী মেল ট্রেন ছাড়া আর কোনও ট্রেন থামে না। এই দুটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে না দাঁড়িয়ে বাইরে দাঁড়ায়। আর তখনই মইয়ে করে ট্রেনে ওঠেন যাত্রীরা। ট্রেন থামতেই দুই ব্যক্তি মই হাতে ছুটে আসেন। তাঁরা ট্রেনের দরজায় মই বসিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা করান। বিনিময়ে মাথাপিছু ১০ টাকা নেন। মশিউর রহমান নামের এক মইওয়ালা জানিয়েছেন, “যাত্রীদের নিরাপদে ওঠানামা করিয়ে আমরা পেটের ভাত জোগাড় করি। এতে যাত্রীরা অসন্তুষ্ট হন না। আমাদের কিছুটা সুবিধা হয়।”
স্টেশনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। এমনকি স্টেশন মাস্টারের অফিসের বাইরেও কুকুর, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই স্টেশনের দায়িত্ব পালন করেন নাটোর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার অশোক কুমার চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবার স্টেশনটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। আগামী দিনে সেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। যদিও তা না হওয়া পর্যন্ত যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন যাত্রীরা।