
বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আনলেন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, ভাইরাল প্রোটিন মারবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে লড়তে শক্তি জোগাবে দেহ কোষকে। ছিন্নভিন্ন করবে ভাইরাল প্রোটিন। এমনই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আনছেন বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বিশাল রাও।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভ্যাকসিন নয়। ড্রাগও নয়। এমন চিকিৎসা পদ্ধতি যা ভাইরাসকে মারবে শরীরের ভেতরেই। বাড়াবে শরীরের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে লড়তে শক্তি জোগাবে দেহ কোষকে। ছিন্নভিন্ন করবে ভাইরাল প্রোটিন। এমনই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আনছেন বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বিশাল রাও।
“ভ্যাকসিন নয়। এমন প্রোটিনের সিরিজ ইনজেক্ট করা হবে শরীরে যা কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। বাহক কোষের সঙ্গে জুড়তে দেবে না ভাইরাল প্রোটিনকে। এর প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাও নষ্ট হবে,” বলেছেন ড. বিশাল রাও। তাঁর দাবি, কাজ প্রায় শেষ। এই সপ্তাহান্তেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উপর এমন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ড. বিশাল বলেছেন, সাইটোকাইন (পেপটাইড যা কোষে বার্তা পাঠায়)প্রোটিনের সমন্বয়ে এমন মিশ্রণ বানানো হয়েছে যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর উপর ইনজেক্ট করা হবে। এই প্রোটিনের মিশ্রণ রোগীর দেহকোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ভাইরাল প্রোটিনগুলোর মোকাবিনা করতে শরীরের সহজাত প্রোটিনগুলোকে উদ্দীপিত করবে। এমন চিকিৎসা পদ্ধতি যা ভেতর থেকে সংক্রমণকে নির্মূল করবে। সরকারি অনুমোদন পেলেই এই পদ্ধতি রোগীর উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার বিশাল রাও।
করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় গোটা বিশ্বকেই এগিয়ে আসার কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডহানাম ঘেব্রেইসাস। দ্রুত বিভিন্ন ড্রাগ ও ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে তার প্রয়োগের কথাও বলেছেন দেশ ও বিদেশের বিজ্ঞানী-গবেষকদের। বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেছেন, মানুষের শরীরের কোষ থেকে ইন্টারফেরন বার হয়। এই রাসায়নিক বাইরে থেকে দেহকোষে ঢোকা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। কিন্তু দেখা গেছে সার্স-কভ-২ (SARS-COV-2)ভাইরাল স্ট্রেন কোষকে সংক্রামিত করলে এই রাসায়নিকের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে।
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বানিয়েছেন দেশের প্রথম কোভিড-১৯ টেস্ট-কিট, প্রসবের সময়ও পিছিয়েছিলেন যে ভাইরোলজিস্ট
ড. বিশাল রাওয়ের কথায়, “এই প্রোটিন মিশ্রণ প্রয়োগ করে আমরা সেই দুর্বল হয়ে পড়া রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে ফের জাগিয়ে তুলব। তাছাড়া দেখা গেছে ইন্টারফেরন যুক্ত ওষুধও কোষের কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে এসেছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সফল হলে এমন ড্রাগ তৈরির চেষ্টাও করা হবে।”
‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টস অ্যান্ড কেমোথেরাপি (Antimicrobial Agents and Chemotherapy)’ জার্নালে এই চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিশাল রাও। তিনি বলেছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন মানুষের দেহকোষের ‘অ্যাঞ্জেওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম-২’ angiotensin-converting enzyme 2” (ACE2) রিসেপটর প্রোটিনের সঙ্গে জোট বেঁধে কোষে ঢুকছে। এর পর দেহকোষের ভেতরে আড়েবহরে বেড়ে অর্থাৎ প্রতিলিপি তৈরি করে কোষের প্রতিরোধ শক্তির দফারফা করে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে সংক্রামিত করছে গোটা শরীরকেই। বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই ভাইরাল স্ট্রেনের জোড় বাঁধার ও প্রতিলিপি তৈরির প্রক্রিয়া রুখতে অনেকটাই সক্ষম হতে পারে রেমডেসিভির ড্রাগ। ল্যাবরেটোরিতে এই ড্রাগ নিয়েও গবেষণা চলছে। সার্স ভাইরাসের পরিবারের যে কোনও সদস্যকে রুখতে এই ড্রাগের নয়া ভার্সন কাজে আসতে পারে।
টিলারোন ( Tilarone) নামে আরও একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নিয়ে গবেষণা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ায় এই ড্রাগের চল রয়েছে। যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশন যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস রুখতে এই ড্রাগ বিশেষ কার্যকরী। এখন কোভিড-২৯ সংক্রমণ ঠেকাতে এই ড্রাগ কাজে আসবে কিনা, তার পরীক্ষাও চলছে।