
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভোটে হেরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিদেয়’ নিশ্চিত হয়েছে। এর পর গোটা দুনিয়ারই আগ্রহ ছিল সম্ভাব্য নতুন মার্কিন সচিবকে নিয়ে। তাঁর মন্ত্রিসভায় সেই পদে কাকে বেছে নেবেন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত জো বাইডেন।
সোমবার ভারতীয় সময়ের রাত ১১ টা নাগাদ হোয়াইট হাউজের পোস্টে ঘোষণা করা হল, পরবর্তী মার্কিন বিদেশ সচিব হচ্ছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এবং সেই ঘোষণা হতেই প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বলা যায় চুম্বকে আপাতত স্বস্তিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
এই ঘোষণা কেন স্বস্তি দিয়েছে, তা বোঝার আগে ব্লিনকেনের পরিচয় জানা জরুরি।
কে এই ব্লিনকেন?
ছেলেবেলা থেকেই নরম প্রকৃতির ব্লিনকেনের একটা বড় সময় কেটেছে প্যারিসে। সেখানে পড়াশুনা করেছেন। কলেজে পড়ার সময় গিটারে সুর তুলে পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান করতেন। ফুটবল খেলতে ভালবাসেন। ওবামার হাত ধরেই অমল আলোয় আসা ব্লিনকেনের। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছিলেন বারাক ওবামা। এদিন হোয়াইট হাউসের ঘোষণার পর ব্লিনকেনের ছাত্র জীবনের বন্ধু তথা আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের চেয়ারম্যান রব ম্যালে বলেছেন, “প্যারিসে যখন ছিলেন ব্লিনকেন তখনও পুরোদস্তুর মার্কিন। আমেরিকার সংস্কৃতি, তার মূল্যবোধ ভরপুর ছিল ওর মধ্যে। মনে রাখতে হবে, তখন কিন্তু পরিবেশটা ছিল মার্কিন বিরোধিতার। আর সেই পরিবেশে ব্লিনকেনও বুঝতে শিখেছিলেন ফ্রান্সের মানুষ আমেরিকাকে কী চোখে দেখে?”
কেবল রব ম্যালে নন, অনেকেই বলছেন, ব্লিনকেন সত্যিকারেরই আন্তর্জাতিক। কোনওরকম সংকীর্ণতা নেই তাঁদের কথায়। কূটনীতিকদের অনেকের মতে, ব্লিনকেনকে বিদেশ সচিব করার অর্থ পরিষ্কার। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে থেকে বেরিয়ে এসে হোয়াইট হাউজ ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় আরও পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে। তা ছাড়া মাইক পম্পেয়ো স্বভাবগত ভাবে যেমন আগ্রাসী ছিলেন, ব্লিনকেন তার বিপরীত। নরম প্রকৃতির। ফলে তাঁকে সামনে রেখে সম্পর্ক শুধরে নেওয়া সহজ হবে।
ব্লিনকেন ছাড়াও নজর কেড়েছেন এভ্রিল হেইনস
এই প্রথম একজন মহিলা আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান (ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টালিজেন্স) হতে চলেছেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি সহ ডজন খানেক ফেডারেল অফিস থাকবে তাঁর অধীনে।
এর আগে ওবামা প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনি বিষয়আশয় দেখতেন এভ্রিল। সিআইএ-র ডেপুটি ডিরেক্টরও ছিলেন।
আমেরিকায় নাইন ইলেভেনের জঙ্গি হানার পর ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টালিজেন্স তথা ডিএনআই পদটি তৈরি করা হয়েছিল। মূলত সবকটি গোয়েন্দা এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য এই পদ ও দফতর তৈরি হয়। এখানে বলে রাখা ভাল, এই ডিএনআই-য়ের ধাঁচেই ভারতে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি তথা এনআইএ তৈরি হয়েছিল।
অন্য সব বিষয় ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইন্টালিজেন্স ব্রিফিংয়ে নজর রাখে ডিএনআই। তবে কোনওরকম গোপন বা কোভার্ট অপারেশন দেখভাল করে না। সেই ক্ষমতা রয়েছে সিআইএ ডিরেক্টরের কাছে।
মন্ত্রিসভার বাকি গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নামও এদিন ঘোষণা করেছেন বাইডেন। যেমন পরবর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হবেন জেক সুলিভান। রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত করা হবে লিন্ডা টমাসকে। তা ছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের দায়িত্ব পাবেন আলেজান্দ্রো মায়োরকাস এবং জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে জন কেরিকে।