
ব্রাজিলে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করল অক্সফোর্ড, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার জনকে
ব্রাজিলের হেলথ রেগুলেটর অ্যানভিসা জানিয়েছে, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রজেনেকার ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে দেশের করোনা হটস্পটগুলিতে। প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ব্রাজিলে কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রজেনেকা প্রাইভেট লিমিটেড। লেমানন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ব্রাজিলে করোনার হটস্পট সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোতে মোট ৩০০০ জনকে দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন। তার মধ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সাও পাওলোতে ২০০০ জন ও রিও ডি জেনিরোতে হাজার জনকে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন।
ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি রীতিমতো শঙ্কাজনক। জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমণের নিরিখে ও মৃত্যুর সংখ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফুটবলের দেশ। ব্রাজিলের হেলথ রেগুলেটর অ্যানভিসা জানিয়েছে, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রজেনেকার ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে দেশের করোনা হটস্পটগুলিতে। প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য। পরবর্তী পর্যায়ে আরও বেশিজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
এপ্রিলে প্রথমবার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করেছিল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। প্রথম দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছিল ভ্যাকসিন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন মহিলা বিজ্ঞানী। নাম এলিসা গ্রানাটো। আরও ৮০০ জনকে দুটি দলে ভাগ করে কন্ট্রোলড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছিল। অক্সফোর্ড জানিয়েছে, দেশের বাইরে প্রথমবার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করা হয়েছে। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট ভাল হলে, অন্যান্য দেশেও ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হবে।
ভ্যাকসিনের ডোজ ঠিক করার জন্য শুয়োরের উপর ট্রায়াল করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ডের সারা গিলবার্টের টিম। এই ট্রায়ালের দায়িত্বে ছিল পিরব্রাইট ইউনিভার্সিটি। ভাইরোলজিস্টরা বলেছেন, শুয়োরের বিপাক ক্রিয়া ও কোষের সঙ্গে মানুষের কোষের অনেক মিল আছে। তাই সেফটি ট্রায়াল করে ডোজের সঠিক মাত্রা ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল।

অ্যাডেনোভাইরাসকে ভেক্টর বানিয়ে ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। জেন্নার ইনস্টিটিউট ভাইরোলজি বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ভ্যাকসিনের ডিজাইন করা হয়েছে। এই গবেষণায় অক্সফোর্ডের পাশে রয়েছে অ্যাস্ট্রজেনেকাও।

সারা গিলবার্টের টিম প্রথমবার যে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছিল তার নাম ChAdOx1 nCoV-19। তবে এই ভ্যাকসিনের ক্নিনিকাল ট্রায়াল রেসাস প্রজাতির বাঁদরের উপর ব্যর্থ হয়। অক্সফোর্ড জানায়, ওই প্রজাতির বাঁদরের শরীরে কোভিড সংক্রমণ রুখতে না পারলেও নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করেছে এই ভ্যাকসিন। পরে নতুন করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের ডিজাইন করে অক্সফোর্ড। বর্তমানে এর নয়া ভার্সনের নাম হয়েছে AZD1222।
কীভাবে তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিন? শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া অ্যাডেনোভাইরাসকে ল্যাবে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে যাতে মানুষের শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে। এরপর, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের কাঁটার মতো অংশ অর্থাৎ স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। এই ভাইরাল প্রোটিন আগে থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা অ্যাডেনোভাইরাসের মধ্যে ঢুকিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। এখন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করলে এই বাহক ভাইরাস অর্থাৎ অ্যাডেনোভাইরাস করোনার স্পাইক প্রোটিনগুলোকে সঙ্গে করে নিয়েই মানুষের শরীরে ঢুকবে। দেহকোষ তখন এই ভাইরাল প্রোটিনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। সেই সঙ্গে দেহকোষের টি-সেল (T-Cell) গুলোকে উদ্দীপিত করবে। এই টি-সেলের কাজ হল বাইরে থেকে শরীরে ঢোকা ভাইরাল অ্যান্টিজেনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া।