
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার নতুন প্রজাতিরা কেন এত সংক্রামক তার ব্যাখ্যা দিলেন নামজাদা বিজ্ঞানী শাহিদ জামাল। গবেষক বলছেন, মিউটেশন মানে হল জিনের গঠন বিন্যাস বদলে যাওয়া। করোনার নয়া প্রজাতিদের মধ্যে দুটি এমন মিউটেশন হচ্ছে যা চিন্তার কারণ। জিনের সাজসজ্জা পাল্টে দিচ্ছে ভাইরাস। স্পাইক প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোডও বদলে যাচ্ছে। ভাইরাসে এই বদল এত ঘন ঘন হচ্ছে যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর তার প্রভাব পড়ছে। ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতাও এই মিউটেশনের ফলে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানী।
অশোকা ইউনিভার্সিটির ত্রিবেদী স্কুল অব বায়োসায়েন্সের ডিরেক্টর ডক্টর শাহিদ জামাল, করোনার মিউটেশন নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছেন। গবেষক বলছেন, হালে করোনার দুই নতুন প্রজাতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্রিটেন স্ট্রেন তথা বি.১.১.৭ স্ট্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মিউট্যান্ট স্ট্রেন। এই দুই নয়া প্রজাতিই অনেক বেশি সংক্রামক ও রোগ ছড়াতে পারে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনে এমন কিছু জিনগত বদল হচ্ছে যা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে বিজ্ঞানীদের। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্রাজিলীয় স্ট্রেন। ভারতের মহারাষ্ট্রে আবার করোনার নতুন এক প্রজাতির হদিশ মিলেছে যার কারণে সংক্রমণের কার্ভ বেড়েই চলেছে। গবেষকের দাবি, এই নয়া স্ট্রেনগুলোর মধ্যে দুই রকমের মিউটেশন হচ্ছে যা স্পাইক প্রোটিনের ধরনই বদলে দিচ্ছে। দেহকোষের এসিই-২ (ACE-2) রিসেপটরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতা আরও বাড়ছে ভাইরাসের।

কী বদল হচ্ছে? বিজ্ঞানী শাহিদ বলছেন, প্রথমত, এন৫০১ওয়াই (N501Y)মিউটেশন। এটি এক ধরনের মিউটেশন যেখানে দেহকোষের রিসেপটর প্রোটিনের ACE-2 সঙ্গে ভাইরাসের স্পাইক (S)প্রোটিনের জোট বাঁধার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। সহজভাবে বললে, আর শক্তপোক্তভাবে দেহকোষকে আঁকড়ে ধরতে পারে ভাইরাস এবং কৌশলে কোষের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। এই ধরনের মিউটেশন দেখা গেছে ব্রিটেন স্ট্রেনে। স্পাইক প্রোটিন অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। যার মধ্যে ৬৯ ও ৭০ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড একেবারে মুছে দিয়েছে ভাইরাস। সহজ করে বলতে হলে, স্পাইক প্রোটিনের ভেতরে দুটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের অস্তিত্বই মিটিয়ে দিয়েছে। এর কারণ একটাই, খুব দ্রুত কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ে সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়া।

দ্বিতীয়ত, ই৪৮৪কে (E484K) মিউটেশন। এই ধরনের বদলে ৪৮৪ অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বদলে দিচ্ছে ভাইরাস। ফলে স্পাইক প্রোটিন অনেক দ্রুত দেহকোষের রিসেপটর প্রোটিন চিনে নিতে পারছে। বিজ্ঞানী বলছেন, আরটি-পিসিআর টেস্টে করোনা পরীক্ষা করার সময় ভাইরাল জিনোম শণাক্ত করা হয়। পিসিআর টেস্ট ভাইরাসের জিন চিহ্নিত করে বলে দেয় যে করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ। কিন্তু এইভাবে অ্যামাইনো অ্যাসিডর কোড মুছে দেওয়ার ফলে ভাইরাসের একটা নির্দিষ্ট জিনের বিন্যাসই বদলে যাচ্ছে। ফলে সেটা আর আরটি-পিসিআর টেস্টে ধরা পড়ছে না। ডক্টর শাহিদের মতে, অ্যামাইনো অ্যাসিডের ৪৮৪ ও ৫০১ মিউটেশন যদি একসঙ্গে হয়, তাহলে ভাইরাস আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। এখন যে ফর্মুলায় ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে তা নয়া স্ট্রেনকে কতটা ঠেকাতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।