
দিনে জেল্লা, রাতে আরাম, আদুরে ত্বকের জন্য ক্রিমে থাকতে হবে এইসব উপাদান
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুন্দর, ঝকঝকে মাখনের মতো ত্বক পেতে হলে শুধু গাদা গাদা ক্রিম ঘষলেই চলে না। ঘন ঘন ফেসিয়ালও খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। বাড়িতে ফেস-প্যাক বানালেও তার উপকরণ কী কী হবে তার খেয়াল রাখেন না অনেকেই। বাহারি উপকরণ নয়, ত্বকের পুষ্টি যোগায় এমন প্রোটিন-ভিটামিন বা খনিজ উপাদানের কোনও ঠিক কী অনুপাতে মেশালে শুষ্ক-রুক্ষ ত্বকও একেবারে হাই ভোল্টেজের মতো আলো ছড়াবে, তার খোঁজ রাখেন না বেশিরভাগই। ফলের খোসা, ফলের রস, অ্যালোভেরা, মধু, শশার বীজ থেকে চাল-ডাল-বেসন যাই বেটে-ঘষে প্যাক বানানো হোক না কেন, বাজার চলতি যতই দামি ব্র্যান্ডের ক্রিম কিনে বাহাদুরি দেখানো হোক না কেন, ত্বক অনুযায়ী প্রোটিন-ভিটামিন না থাকলে কিন্তু সব চেষ্টাই মাটি।
আমাদের দেশের জলবায়ু অনুযায়ী ত্বক গরম সইতেই অভ্যস্ত। শীত বেশিদিন থাকে না। জ্বালাপোড়া রোদে আমাদের ত্বকে বাদামি ছোপ পড়ে যাকে বলা হয় ট্যান। আসলে এই ট্যান কিন্তু খারাপ নয়। মাখন রঙা ত্বকে বাদামি আভা দেখা গেলেই ক্রিম-ফেসিয়ালের হুড়োহুড়ি পড়ে যায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে, অবশ্য হালে মধ্যবয়সী থেকে প্রৌঢ়ারাও স্টাইল-স্টেটমেন্ট নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ট্যান ত্বককে ক্ষতিকর রশ্মি এবং ক্যানসার থেকে বাঁচায়। তাই নানা রাসায়নিক মিশ্রিত ফেসিয়াল ক্রিম ব্যবহার না করে কোন ত্বকের জন্য কোনটা উপকারী সেটা জেনে নেওয়াই ভাল।
ক্রিমের আলতো আদরে জড়াক বয়ঃসন্ধি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই ত্বকের যত্ন একটু একটু করে নেওয়া উচিত। তার আগে ত্বক স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে পারে। বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই ব্রণ, র্যাশ নানা রকম উৎপাত দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রেই ত্বকের জলীয় ভাব কমে যেতে থাকে। ত্বক শুষ্ক হোক বা তৈলাক্ত, ফোমি ক্লেনজার ব্যবহার করলে ত্বকের নিজস্ব আর্দ্রতা বজায় থাকে। হাইড্রো বুস্টার ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে ঘাম কম হবে, ত্বক অনেক সজীব থাকবে।
যেসব ছেলেমেয়েদের ঘন ঘন রোদে দৌড়োদৌড়ি করতে হয়, তাদের ক্রিমে যেন অবশ্যই থাকে ১০-১৫% আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) । আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড আসলে অনেকগুলো অ্যাসিডের সমস্টি—গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক, টার্টারিক ও সাইট্রিক অ্যাসিড। ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কমায়, অনেক আর্দ্র রাখে। এর বিকল্প পলিহাইড্রক্সি অ্যাসিড (Polyhydroxy acids)। কাজ একই।
প্রেগন্যান্সি বা হরমোন থেরাপি, ক্রিমে এরা থাকলে আর চিন্তা নেই!
ডেড স্কিন একটা বড় সমস্যা। মানে ঔজ্জ্বল্য হারানো শুষ্ক ত্বক। তাকে ছেঁটে ফেলার জন্য বিটা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড Beta-hydroxy acid (salicylic acid) ক্রিমে থাকা খুবই দরকার। আরও একটা উপাদান আছে, যাকে ত্বকের জন্য একেবারে পারফেক্ট বলেছেন ডার্মাটোলজিস্টরা। সেটা হল হাইড্রোকুইনন (Hydroquinone) । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেগন্যান্সির সময় বা সিজার হলে অনেকের ত্বকে কালো ছোপ পড়ে যায়। বলিরেখার মতো চামড়া কুঁচকে যেতেও দেখা যায়। হরমোন থেরাপির পরেও এই সমস্যায় ভোগেন বেশিরভাগ মহিলারা। সেক্ষেত্রে এমন ক্রিম বাছতে হবে যাতে হাইড্রোকুইনন বেশি মাত্রায় থাকে। যদি হাইড্রোকুইননে কারও অ্যালার্জি থাকে তাহলে কোজিক অ্যাসিড (Kojic Acid) বিকল্প হতে পারে। ছত্রাক থেকে এই উপাদান পাওয়া যায় এবং গবেষকরা দেখেছেন কোজিক অ্যাসিড ত্বকের মেলানিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। রোদে বার হলেও ত্বক তার প্রতিরোধশক্তি নিজেই গড়ে তুলতে পারে।
দিনের জেল্লা, রাতের আরাম
রোদ-ঝড়-দাবদাহ যাই হোক না কেন, টিপটপ পোশাকের সঙ্গে ঝকঝকে স্কিনটাও স্টাইল-স্টেটমেন্টের মধ্যেই পড়ে। তারজন্য কড়া রাসায়নিকের মেকআপ নয়, বরং ভেতর থেকেই ত্বক হোক জেল্লাদার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের ক্রিমের জন্য দরকার সানস্ক্রিন ও ভিটামিন সি।
সানস্ক্রিন—রোদের তেজেও ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সানস্ক্রিনের বিকল্প নেই। তবে মেডিকেটেড সানস্ক্রিনই বাছা দরকার, যাতে এসপিএফ থাকবে ১৫ বা তার বেশি (ত্বক অনুযায়ী)। সানস্ক্রিনে থাকুক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গরমের জন্য ভিটামিন সি বা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন কিনে নিন। এই ধরনের ক্রিম, সেরাম ও লোশন দূষণের ক্ষতি রোধ করে। রোদে ত্বকে ফুটে ওঠা ভাঁজগুলিকে তা মিলিয়ে দেয়। স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা ফেরায়, চামড়াও মসৃণ রাখে। রাতে ওই লোশন ধুয়ে ফেলার পরেও ঔজ্জ্বল্য হারায় না।
এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড—ভিটামিন সি-র এই রূপ ত্বকের যত্ন নেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্রিমে এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকলে ত্বকে লালচে ভাব পড়ে না, র্যাশ বা ঘামাচি অথবা যে কোনও সংক্রমণ থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করে।
রাতের ক্রিমে থাকুক—রেটিনল-ভিটামিন-এ প্রোডাক্ট ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না, স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড (HA)—ত্বকের যে কোনও দাগছোপ দূরে রাখে এই অ্যাসিড। সারা রাত ত্বককে ময়শ্চারাইজ় করে।
ভিটামিন ই—এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যে কোনও কমপ্লেক্সনে এবং ত্বকের ধরনে কাজ করতে পারে।
সেরামিডস—ন্যাচরাল প্রোটিন যা ত্বকের টক্সিন ছেঁকে বার করে দেয়।
গ্লিসারিন—ত্বকের শক্তি। আর্দ্র রাখে, ত্বকের পুষ্টি যোগায়।
ল্যাকটিক অ্যাসিড—ডেড স্কিন ছেঁটে ফেলে, ত্বককে ময়শ্চারাইজ় করে।
সোরিয়াসিস আতঙ্ক নয়
শরীরের বিভিন্ন অংশে গোল গোল ও এবড়োখেবড়ো চাকার মতো দাগ তৈরি হয় ও সেখানকার ত্বক থেকে মাছের আঁশের মতো খোসা উঠতে থাকে। ত্বক শুষ্ক তো হয়ই, র্যাশ-চুলকানি থাবা বসায়। ধীরে ধীরে এই অসুখে আক্রান্ত স্থানের রং বদল হয়। লালচে হয় কখনও, কখনও একটু কালচে ছোপের মতো দেখায়। কারও ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান একটু ফুলে যায়। কারও ক্ষেত্রে চামড়া ফেটে রক্ত বা পুঁজও বেরতে পারে। ত্বকের এই রোগের নাম সোরিয়াসিস (Psoriasis) যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আতঙ্কের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ তো সারানো যায় না, তবে বশে রাখা সম্ভব। ত্বকের যে কোষগুলি পূর্ণতা পায় না, সেগুলিই মাছের আঁশের মতো সিলভারি স্কেল তৈরি করে। বিশেষ করে হাত-পায়ের তালুতে, কনুই, হাঁটু, নখে, আবাক মাথার ত্বকেও দেখা যায় এমন খসখসে ত্বক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রোগ সংক্রামিত নয়, একসঙ্গে ওঠাবসা, খাওয়া, রক্তের আদানপ্রদান বা যৌন সম্পর্কে সোরিয়াসিস ছড়ায় না। তবে লিভারের সমস্যা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠায় এর প্রভাব বাড়ে।
সোরিয়াসিস হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতোই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। স্টেরয়েড আছে এমন কোনও উপকরণ সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আনলে বিপদ। গ্লিসারিন এড়িয়ে চলতে হবে। ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে সবসময়, তবে বাজারচলতি ক্রিমে নয়। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে এমন ক্রিম ব্যবহার করা ভাল, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে। টপিকাল রেটিনয়েডসও ত্বকের প্রদাহ কমায়, তবে তার আগে সানস্ক্রিন মেখে নেওয়া ভাল। ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটরস (Calcineurin inhibitors) যেমন ট্যাক্রোলিমাস (tacrolimus) এবং পাইমেক্রোলিমাস (pimecrolimus) ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি দুটোই কমায়।