
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বদলে গেছে অলকানন্দা নদী? গঙ্গার দুটির উৎসের মধ্যে একটি অলকানন্দা যেমন উত্তরাখণ্ডের দীর্ঘতম নদী, তেমনি হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিতেও এই নদীর বিশেষ গুরুত্ব আছে। চামোলির ভয়ঙ্কর তুষারধসের পর থেকে এই নদীর গতিপ্রকৃতিতে অনেক বদল এসেছে, এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। অলকানন্দা এখন আরও বেশি খরস্রোতা, অশান্ত। সেই স্বচ্ছ, নীল জলরাশির রঙও বদলে গেছে।
অলকানন্দার জলে মাটি, কাদা মিশে স্বচ্ছ ভাবটা হারিয়ে যেত বর্ষার কয়েকটা দিনে। শীতের সময় ফের ঘন নীল জলস্রোত নিয়ে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসত নদী। কিন্তু এই তুষারধস আর হড়পা বানের পর থেকে নদীর বুকে জমেছে পলি, মাটি, কাদা। ধসের একরাশ নুড়ি-পাথর সঙ্গে নিয়ে নদীর স্রোত এখন আরও অশান্ত। নীল জলের বদলে ধূসর, ঘোলা জলের স্রোত বইছে পাহাড়ি ঢালে। এতটা বদল দেখে চমকে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও।


উত্তরাখণ্ডের সতোপন্থ হিমবাহ থেকে এবং ভাগীরথ খড়ক হিমবাহ থেকে জন্ম অলকানন্দার। তিব্বত থেকে আসা সরস্বতীর সঙ্গে মিলে বিষ্ণুপ্রয়াগে এসে ধৌলিগঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে অলকানন্দা। এর পাঁচ উপনদী, এক একটি প্রয়াগ বা সঙ্গমস্থলে মিশে নদীকে পুষ্ট করেছে। বিষ্ণুপ্রয়াগে মিলেছে ধৌলিগঙ্গার সঙ্গে, নন্দপ্রয়াগে নন্দাকিনী নদীর সঙ্গে। কর্ণপ্রয়াগে পিণ্ডার নদীর সঙ্গে মিলে রুদ্রপ্রয়াগে এসে মন্দাকিনী নদীর স্রোতের সঙ্গে মিশেছে। এই চার উপনদী মিলিত হয়ে অলকানন্দা এসেছে দেবপ্রয়াগে, যেখানে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলেছে। এই পাঁচ উপনদীর মিলিত প্রবাহেই অলকানন্দার নাম হয়েছে গঙ্গা। দেবপ্রয়াগ থেকে যে স্রোত ঋিষিকেশ, হরিদ্বার দিয়ে বয়ে সমতলে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাহাড়ি ধস ও হড়পা বানের কারণে এই দেবপ্রয়াগের পর থেকে নদীর জলের রঙ অনেক বদলে গেছে। ধসের নুড়ি, পাথর, মাটি দিয়ে ঋষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা অলকানন্দার সঙ্গে মিশে গেছে। তাই নদী এখন সেই স্বচ্ছ, নীল রঙা নয়। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, চামোলি জেলার পাহাড়ি উপত্যকায় যেখানে তুষারধস নেমেছিল সেই এলাকাতেই ঋষিগঙ্গা নদীর গতিপথে নুড়ি, পাথরের দেওয়ার তৈরি হয়ে একটি কৃত্রিম হ্রদ তৈরি হয়েছে। এই হ্রদের কারণে নদীর প্রবাহ বাধা পাচ্ছে। প্রবল চাপের মুখে দেওয়াল ভেঙে ভয়ঙ্কর জলরাশি যে কোনও সময় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসতে পারে। ফের হড়পা বানে ভাসতে পারে চামোলির গ্রাম। এই হ্রদের জল দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে এলে ফের নুড়ি, পাথুরে মাটি মিশবে অলকানন্দার জলে। আরও অশান্ত হয়ে উঠবে নদীর স্রোত।
উত্তরাখণ্ড দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার অঙ্কুর কানসাল বলেছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নদীর গতিপথেও বদল আসছে। তপোবনের কাছে নদীর স্রোত ভেঙেচুরে গেছে। জলে পলি, মাটি জমে প্রবাহ বাধা পাচ্ছে। এই পলি-মাটি মেশানো স্রোত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ঋষিকেশ অবধি পৌঁছে গেছে। শীতকালে অলকানন্দার এমন ধূসর জলস্রোত ভাবাই যায় না। এর প্রভাব কতটা এবং কীভাবে পরিবেশের ওপর পড়বে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। হেমবতী নন্দন বহুগুণা গাড়ওয়াল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ওয়াই পি সুন্দ্রিয়াল বলেছেন, নদীর জল আবার কবে স্বচ্ছ তাও বোঝা যাচ্ছে না।