
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকাতেই ভরসা পেয়েছিল বিশ্ব। এখন সেই টিকাই প্রশ্নের মুখে। ঠিক কতটা ডোজে সাফল্য এসেছে সে নিয়ে ধন্দ কাটছে না। একটা গড় পরিমাণ ট্রায়াল রিপোর্টে বলেছে অ্যাস্ট্রজেনেকা যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তর্ক-বিতর্ক চলছে বিজ্ঞানীমহলে। টিকার ট্রায়ালেই কি তার মানে গলদ ছিল? সরাসরি সে কথা না বললেও, সংস্থার তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে ফের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হতে পারে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার সিইও পাস্কাল সরিয়ট বলেছেন, টিকায় কোনও গলদ নেই। মানুষের শরীরে কার্যকর হয়েছে এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত। টিকার ডোজ নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে ফের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে পারে। তবে অল্প সংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা করলেই নিশ্চিত ফল পাওয়া যাবে। যেহেতু টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই, সমস্যা তৈরি হয়েছে ডোজের মাত্রা নিয়ে, তাই নতুন ট্রায়ালে বেশিদিন সময় লাগবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নতুন ট্রায়ালে অনুমতি দেবে কিনা সে নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা নিয়ে কী প্রশ্ন উঠেছে?
অক্সফোর্ড টিকার তৃতীয় পর্বের প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে আসার পরেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। শুরুতে অ্যাস্ট্রজেনেকা বলেছিল তাদের টিকা ৭০ শতাংশ কার্যকরী। পরে আবার তারা জানায়, টিকা ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত কাজ করেছে। দু’রকম রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অ্যাস্ট্রজেনেকা ফের জানায়, টিকার একটি ডোজ দিলে নাকি তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে। অথচ যদি টিকার সম্পূর্ণ ডোজ অর্থাৎ ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবকদের তাহলে নাকি টিকার কার্যকারিতা ফের ৬০-৭০ শতাংশে নেমে যাচ্ছে। তাই ঠিক কতটা ডোজে সাফল্য এসেছে তার একটা গড় পরিমাণ জানায় অ্যাস্ট্রজেনেকা।
টিকায় গলদ নেই? সমস্যা নিয়ে কী বলেছে অক্সফোর্ড?
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, বিভ্রান্তির কোনও কারণ নেই। টিকার ডোজ যেমন কমবয়সীদের দেওয়া হয়েছে তেমনি ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদেরও দেওয়া হয়েছে। বয়সের ফারাকে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় তারতম্য তৈরি হয়। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের শরীরে যতটা অ্যাডাপটিভ ইমিউনিটি বা মেমরি বি-কোষ সক্রিয় হবে, প্রবীণদের শরীরে ততটা নয়। টিকার ডোজেও তাই হেরফের দেখা যাবে। তেমনটাই হয়েছে অক্সফোর্ড টিকার ক্ষেত্রেও।
কমবয়সীদের টিকার একটি ডোজ দিলেই তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। বি-কোষ সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। আবার অ্যাকটিভ হয়েছে ঘাতক টি-কোষও। খুব তাড়াতাড়ি ২৮ দিনের মধ্যেই শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে টিকার ডোজ কাজ করতে কিছুটা সময় বেশিই লাগবে। তাই দুটি ডোজ ৬২ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে বলে দেখা গেছে। তবে এই ট্রায়াল রিপোর্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে।
অক্সফোর্ড টিকার কম ডোজে ফল ভাল হচ্ছে আবার বেশি ডোজ দিলেই তা কম কার্যকরী হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে নিজের মতামত দিয়েছেন ভ্যাকসিন গ্রুপের মুখ্য গবেষক সারা গিলবার্ট। তাঁর মতে, চ্যাডক্স টিকা অ্যাডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে। এই ভেক্টর ভাইরাসের কাজ হল শরীরে ঢুকে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলা। যেহেতু ভাইরাসকে আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে তাই এর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা নেই। সারা বলছেন, এমন হতে পারে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজে অ্যাডেনোভাইরাস যখন শরীরে ঢুকছে তার প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এক ধাক্কায় বি-কোষ ও টি-কোষ জেগে উঠে ইমিউন পাওয়ার বাড়িয়ে তুলছে। তাই দেখা যাচ্ছে, টিকা বেশিমাত্রায় কার্যকরী হচ্ছে। ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয়েই থাকছে শরীরে।
এবার যখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে তখন শরীরের কোষে আর নতুন করে কোনও সাড়া জাগছে না। অর্থাৎ প্রথম ডোজের পরেই শরীরের ইমিউন কোষগুলো ভাইরাসকে চিনেই রাখছে এবং তার প্রতিরোধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে ফেলছে। দ্বিতীয়বার যদি বেশি ডোজ দেওয়া হয় তাহলে তার প্রভাব চাপা পড়ে যাচ্ছে। তাই এমন মিশ্র ফল দেখিয়েছে। তবে তৃতীয় পর্বের সম্পূর্ণ ট্রায়াল রিপোর্ট আসার পরেই নিশ্চিত তথ্য দেওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন সারা।