
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিনের প্রভাবে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই।
হিমালয়ের কোলে ছোট্ট দেশটা আজ চরম সঙ্কটে, দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তাই কোনওভাবেই সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না নেপাল, নয়াদিল্লিকে আজ এমনটাই জানিয়েছেন ভট্টরাই। তাঁর বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে নেপালের ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ভিত খুবই শক্তিশালী। তাই তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় এই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায় না নেপাল। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনার টেবিলে বসে দুই দেশই তাদের পারস্পরিক তিক্ততা মিটিয়ে নিক।
গত কয়েকমাসে ভারতের সঙ্গে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছে নেপাল। গত এপ্রিলে ভারতের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন সীমান্তে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করে। তা নিয়ে আপত্তি তোলেন ওলি। এরপর নেপাল একটি নতুন ম্যাপ প্রকাশ করে। তাতে ভারতের কালাপানি এবং লিপুলেখ অঞ্চলকে নেপালের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। এর পরেই বিরোধ চরমে ওঠে। নেপালের নতুন ম্যাপের কঠোর সমালোচনা করে ভারত। দিল্লি থেকে বলা হয়, নেপাল কৃত্রিমভাবে নিজেদের দেশের জমি বাড়িয়ে দেখিয়েছে। ভারতের যে এলাকাগুলি নেপাল নিজের বলে দাবি করছে, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। সম্পর্কের এই তিক্ততার মধ্যেই পূর্ব লাদাখ সীমান্ত নিয়ে চিনের সঙ্গে অসন্তোষ চরমে ওঠে ভারতের। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিনের শি জিনপিং সরকারের প্ররোচনাতেই নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের ক্রমেই অবনতি হতে থাকে ভারতের।
ভট্টরাই বলছেন, চিনের প্রভাব সাঙ্ঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে নেপালে। এমনিতেও নেপালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল গোটা ডিসেম্বর জুড়েই। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সরকারের মতবিরোধ শুরু হয়েছিল। পদত্যাগ করেছিলেন মন্ত্রিসভার সাতজন সদস্য। এই পরিস্থিতিতে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ভেঙে দিয়েছিলেন কে পি শর্মা ওলি। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন নেপালি কংগ্রেসের সমর্থকরা। নেপালে যাবতীয় অশান্তির পেছনে চিনের প্রভাব আচে বলে দাবি করেছেন ভট্টরাই। জানিয়েছেন, গত মাসে নেপালে চিনের রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকি দফায় দফায় প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। এর আগেও নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলিয়েছে চিন। নেপালের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বলেছেন, চিন তাঁদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ইতিমধ্যে একটি ছাত্র সংগঠন চিনের দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা রাখা কোনওভাবেই ঠিক হবে না, এমনটাই বক্তব্য বাবুরাম ভট্টরাইয়ের। তিনি বলেছেন, নেপাল এক প্রচণ্ড অস্থির সময়ের মদ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ভারতের সমর্থন দরকার। তাঁর বক্তব্য, নয়াদিল্লি মনে করে নেপাল পুরোপুরি চিনের পক্ষে রয়েছে। তেমনটা নয়। বরং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক বেশি মজবুত। তাই দুই দেশের আদান প্রদান আবার আগের মতো শুরু করার চেষ্টা করতে হবে।