
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘ডুবে যাচ্ছি আমরা’, আমেরিকার প্রায় সব হাসপাতাল, নার্সিংহোমের ডাক্তারদের বক্তব্য একই। ভিড় বাড়ছে কোভিড রোগীর। ঠাঁই নেই কোথায়। উপচে পড়েছে আইসিইউ। বাড়ছে মৃত্যুও।
কানসাস, ওহায়ো, মিনেসোটা, মিশিগান, নর্থ ডাকোটা, টিনেসি, ওকলাহোমার কোভিড পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। কানসাসের একটি হাসপাতালের ডাক্তার ড্রিউ মিলার বলেছেন, রোগীদের ভর্তি করার মতো বেড নেই। আইসিইউগুলো ঠাসা। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা নেই। রোগীর ভিড় এতই বেশি নতুন রোগীদের জায়গা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। মিলার বলছেন, প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের বাইরে বসিয়েই চিকিৎসা করতে হচ্ছে। এমন মারাত্মক অবস্থা এর আগে দেখেনি আমেরিকা।
৩০ বছরের কোভিড রোগীকে বুকে পাম্প করেই প্রাণে বাঁচিয়েছেন ডাক্তাররা। কৃত্রিম অক্সিজেন সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশনে রাখার সুবিধা ছিল না। কেনসাসের চিফ মেডিক্যাল অফিসার বলেছেন, শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিলেন ওই যুবক। এদিকে হাসপাতালে একটাও বেড খালি নেই। ডাক্তাররা চেস্ট কম্প্রেশন করে রোগীকে বাঁচান। দিনের পর দিন যেভাবে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে তাতে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে।
কোভিড আক্রান্তের নিরিখে এখনও বিশ্বের পয়লা নম্বরেই রয়েছে আমেরিকা। আক্রান্ত কোটি ছাড়িয়েছে। মৃত্যু আড়াই লাখের বেশি। টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়ায় কোভিড রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ডাক্তার মিলার বলছেন, কোভিড ট্র্যাকিং প্রোজেক্টে ধরা পড়ছে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর অবধি করোনা সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। উইসকনসিন, নেব্রাস্কা, ডাকোটায় সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। লকডাউনে শিথিলতা, মাস্ক না পরার অভ্যাস, যথেচ্ছভাবে মেলামেশাকেই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শীতের সময় আমেরিকায় টুইনডেমিক পরিস্থিতিরও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মারণ ভাইরাসের সঙ্গেই এবার সংক্রামক ফ্লুয়ের আতঙ্কও প্রবল হচ্ছে। শীতের আগে এই ফ্লু বা ভাইরাল ফিভার জাঁকিয়ে বসে মার্কিন মুলুকে। সেই সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জার উৎপাতও বাড়ে। করোনাকালে আরও দুই ভাইরাসজনিত রোগের উপদ্রবে এখন ‘টুইনডেমিক’ পরিস্থিতিতে রয়েছে আমেরিকা। মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, অক্টোবরের আগে থেকেই এই ফ্লু-এর প্রকোপ আরও বাড়বে আমেরিকায়। এদিকে শীতের সময় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে।
জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট বলছে, গত জুলাই মাসে আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছে ৪০ হাজারের কাছাকাছি। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি করোনা সংক্রমণের এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে রোগীদের ঠাসাঠাসি ভিড়। অন্যদিকে, দক্ষিণ ক্যারোলিনা ও উটাহ-তে জুলাই মাস থেকে করোনার সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে করা হচ্ছে করোনার তৃতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে।