
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সারিয়ে ওঠার পরে অন্তত ৬ মাস সুরক্ষা দেবে অ্যান্টিবডি। রোগ প্রতিরোধ শক্তিও বাড়ছে ধীরে ধীরে। নতুন গবেষণায় এমনটাই দাবি করলেন বিজ্ঞানীরা।
‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় ইমিউনিটি বাড়ছে মানুষের শরীরে। ইমিউন কোষ বা মেমরি বি কোষ এখন অনেক সক্রিয়। তাই ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বও বাড়ছে। কম করেও ছ’মাস ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে অ্যান্টিবডি। করোনার নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।
করোনার পুনঃসংক্রমণ বা রিইনফেকশন নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিজ্ঞানীরা। সংক্রমণ একবার সারিয়ে ওঠার পরেও দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও ভাইরাসের সংক্রমণ ধরে যাচ্ছে রোগীদের। এমনও দেখা গেছে, দ্বিতীয়বারে সম্পূর্ণ আলাদা ভাইরাস স্ট্রেন ঢুকেছে শরীরে। যেহেতু প্রথমবার করোনা সারিয়ে ওঠার পরে অ্যান্টিবডির সংখ্যা তেমনভাবে বাড়েনি তাই নতুন স্ট্রেনের মোকাবিলা করার মতো রোগ প্রতিরোধ শক্তিও তৈরি হয়নি শরীরে। তাই সহজেই ভাইরাসের রিইনফেকশন ধরে গেছে শরীরে।
গবেষক মাইকেল সি নুসেনজ়ওয়েইগ বলেছেন, রক্তরস বা প্লাজমায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বকাল বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তার স্থায়িত্ব পাঁচ থেকে সাত মাস। যদি রোগীর শরীরে কোনও ক্রনিক রোগ বা জটিল সংক্রমণজনিত রোগ না থাকে তাহলে এই অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব আরও বাড়বে। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন (S) দেহকোষের ACE2 ও CD147 রিসেপটর প্রোটিনের সঙ্গে জোট বেঁধে কোষে ঢোকার পরেই প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। ভাইরাল প্রোটিন বা অ্যান্টিজেনের খবর পেলেই রক্তের বি লিম্ফোসাইট কোষ (B Cell) বা বি-কোষ উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। এই কোষ তখন অ্যান্টিজেনের প্রতিরোধে বিভাজিত হয়ে নিজের অসংখ্য ক্লোন তৈরি করে। এই কোষগুলি থেকেই রক্তরস বা প্লাজমায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা অ্যান্টিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। করোনা সারাতে এই অ্যান্টিবডিই বড় ভরসা গবেষকদের।
গবেষকরা বলছেন, করোনা সারিয়ে ওঠার পরে মেমরি বি-কোষ তৈরি হচ্ছে রক্তরসে। এই মেমবি বি –কোষ ভাইরাসকে চিনে রাখবে। ওই জাতীয় কোনও ভাইরাল স্ট্রেন পরবর্তীকালে দেহকোষে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেবে।শুরুতে বলা হয়েছিল, করোনার অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব তিন মাসের বেশি নয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সংক্রামিত রোগীদের রক্তরসে অ্যান্টিবডির টিকে থাকার সময় কম করেও পাঁচ মাস। গবেষক বলছেন, সংক্রমণের ঠিক পরেই যে প্লাজমা কোষ তৈরি হয় তার স্থায়িত্ব বেশিদিন নয়। এটা হল ইমিউন রেসপন্সের প্রথম ধাপ।
দ্বিতীয় ধাপে যে প্লাজমা কোষ তৈরি হয় তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি। এই প্লাজমা সেল থেকেই যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে তার টিকে থাকার সময়ও হবে বেশিদিন। এই হাই-কোয়ালিটি অ্যান্টিবডি ছয় থেকে সাত মাসের বেশি টিকে থাকতে পারে।