
রাতের ভিয়েনায় হত্যালীলার দায় নিল ইসলামিক স্টেট, পাকড়াও আরও ১৪ জিহাদি
ফ্রান্সের পরে ভিয়েনাও যে ইসলামপন্থী জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে সে নিয়ে সন্দেহ ছিলই। অস্ট্রিয়ার চান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জ গতকালই বলেছিলেন, বছরের ভয়ঙ্করতম জঙ্গি হামলা হয়েছে মধ্য ভিয়েনায়।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কালাশনিকভ নিয়ে ভিয়েনার রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছইল বছর কুড়ির কুজটিম ফেজুলাই। ইসলামিক স্টেটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ার আগে অবধি অন্তত চারজনকে হত্যা করেছে কুজটিম। গুলিতে জখম বহু মানুষ।
ফ্রান্সের পরে ভিয়েনাও যে ইসলামপন্থী জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে সে নিয়ে সন্দেহ ছিলই। অস্ট্রিয়ার চান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জ গতকালই বলেছিলেন, বছরের ভয়ঙ্করতম জঙ্গি হামলা হয়েছে মধ্য ভিয়েনায়। এই হামলার পিছনে কোনও জঙ্গি সংগঠনের হাত থাকতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভিয়েনার নানা জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। রাতে হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ। মধ্য ভিয়েনায় একটি ইহুদিদের উপাসনালয়ের (সিনাগগ) কাছে আচমকাই কান ফাটানো গুলির আওয়াজ শোনা যায়। তার পরেই আর্ত চিৎকার। ততক্ষণে আততায়ীদের গুলিতে জখম হয়ে লুটিয়ে পড়েছেন অনেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য ভিয়েনার আরও ছ’টি জায়গায় একই সময় হামলা চালিয়েছে আততায়ীরা। তাদের কাছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে এক পুলিশ অফিসারের।
অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহমার বলেছেন, সিনাগগের কাছএ বন্দুক হাতে এক জঙ্গিকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। সেই ফুটেজ সামনে এসেছে। পরে পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। কয়েক রাউন্ড গুলির লড়াই চলে। পুলিশের গুলিতে খতম হয় ওই জঙ্গি। জানা গিয়েছে, ওই জঙ্গির নামই কুজটিম ফেজুলাই। তার কাছ থেকে একাধিক আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কুজটিমের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ঘেঁটে তদন্তকারী অফিসাররা দেখেছেন, হামলা চালানোর আগে ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করেছিল এই জঙ্গি। হাতে কালাশনিকভ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসলামিক স্টেটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি কুজটিম। এর আগেও একাধিক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে নাম জড়িয়েছে তার। অস্ট্রিয়ান হলেও উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার নাগরিকত্বও আছে কুজটিমের। সিরিয়ায় আইএস শিবিরে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। ২২ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল তাকে। তবে আইনকে ফাঁকি দিয়ে মুক্তি পেয়ে যায় কুজটিম। তদন্তকারীরা বলছেন, জুরিখের কাছে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে সুইস পুলিশের যাদের যোগ রয়েছে কুজটিমের সঙ্গে। এই জঙ্গির নেটওয়ার্ক বহুদূর অবধি ছড়িয়ে আছে বলেই দাবি তদন্তকারীদের। ভিয়েনায় ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের যোগ রয়েছে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে। পুলিশের দাবি, এরা প্রত্যেকেই ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করে।
নেহমার বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি হামলাকারী জঙ্গি দলকে পাকড়াও করা হবে। ভিয়েনার মানুষের মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা হবে। সোমবার রাতের জঙ্গি হামলার পর থেকে গোটা শহর কার্যত নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে বারণ করা হয়েছে। শহরের নানা জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। নেহমারের দাবি, আততায়ী একজন ছিল না। বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।