
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্যানিটারি প্রোডাক্ট কিনতে আর দাম দিতে হবে না। যে ব্র্যান্ডের বা যত দামের ন্যাপকিনই হোক না কেন, একেবারে বিনামূল্যেই দেবে এই দেশের সরকার। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ করে সমস্ত স্যানিটারি প্রোডাক্টই পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। ঋতুস্রাবের দিনগুলো আর যন্ত্রণার হবে না। স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে কাপড় বা অস্বাস্থ্যকর কিছু ব্যবহার করতে হবে না প্রত্যান্ত এলাকার মেয়েদের। মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষিত রাখতে যে কোনও জীবনদায়ী ওষুধের মতো ঋতুকালীন ব্যবহার্য স্যানিটারি ন্যাপকিনেরও একই রকম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তাও বোঝানো হবে যত্ন করে।
স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানো বা কর ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অনেক দেশই। তবে ‘পিরিয়ড পভার্টি’ ঘোচানোর অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স। দেশের সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্যাড, ট্যাম্পন, মেনস্ট্রুয়াল কাপ বা অন্যান্য স্যানিটারি সামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকর। দেশের সমস্ত কমিউনিটি সেন্টার, ইউথ ক্লাব ও ফার্মাসিগুলিতে স্যানিটারি প্যাড বিনামূল্যেই পাওয়া যাবে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলিতেও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখা হবে।
ফরাসি শিক্ষামন্ত্রী ফ্রেডেরিক ভাইডাল বলেছেন, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলিতে মেশিন রাখা থাকবে। সেখান থেকে স্যানিটারি প্যাড, স্যানিটারি টাওয়েল, ট্যাম্পন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে পারবেন পড়ুয়ারা। ঋতুকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন থাকার পাঠও দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবে শুধু পড়ুয়ারা নন, এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সমস্ত মহিলাদের জন্য স্যানিটারি প্রোডাক্ট বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
ফ্রান্স একা নয়, গত বছর নভেম্বরে স্কটল্যান্ডও একই ঘোষণা করে। দেশের সব মহিলার জন্যই স্যানিটারি প্রোডাক্ট বিনামূল্যে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্ট। ‘দ্য পিরিয়ড প্রোডাক্টস (ফ্রি প্রভিশন) স্কটল্যান্ড বিল’ আনা হয়েছিল আগেই। জানা গেছে, সেখানে ১১২টি ভোট পড়েছিল এর সপক্ষে। বিপক্ষে ভোট পড়েনি একটিও। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশও একই পথে হেঁটেছে সপ্তাহ দুই আগেই। পিরিয়ড পোভার্টি নিয়ে ক্যাম্পেন চলছে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পিরিয়ড পভার্টি কী? ঋতুকালীন সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, পিরিয়ড নিয়ে সচেতনতার অভাব, লজ্জা-সঙ্কোচ, নানারকম অন্ধবিশ্বাস যখন চেপে বসে থাকে তখন সে পরিস্থিতিকে পিরিয়ড পভার্টি বলে। ভারত শুধু নয়, বিশ্বের অনেক দেশই এখনও পিরিয়ড পভার্টির শিকার। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও মহিলারা স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার শেখেননি। ঋতুকালীন সময়ে ভরসা এক টুকরো কাপড় বা কোনও অস্বাস্থ্যকর দ্রব্য। ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও কথা বলতে সঙ্কোচ করেন সেসব এলাকার মহিলারা। কিশোরী মেয়েরাও ঋতুকালীন সময় পরিচ্ছন্নতা মেনে না চলায় নানা রকম রোগের শিকার হয়। সমাজের এই ভয়ঙ্কর অবস্থাকেই বলে পিরিয়ড পভার্টি যার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে অনেক দেশই।
পিরিয়ড পভার্টির হাজারো উদাহরণ রয়েছে ভারতেই। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে শুধু প্রত্যন্ত এলাকা নয় শহরাঞ্চলেও ঋতুস্রাব ও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে অনেকের মধ্যেই। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেন না বেশিরভাগ মহিলাই। ঋতুস্রাবের সময় আদিবাসী গরিব মেয়ে, বৌয়েদের ভরসা এক টুকরো কাপড় অথবা ছাই। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষা দেখিয়েছিল দেশের মাত্র ৫০ শতাংশ মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন। তা-ও দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা প্রসারের পরে। ঋতুকালীন সময় মেয়েদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতার প্রচার করতে ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচী নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর জনৌষধি কেন্দ্রগুলি থেকে মাত্র ১ টাকাতেই পাওয়া যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন। ‘সুবিধা’ ব্র্যান্ডের আওতায় গত বছর থেকেই কম দামে স্যানিটারি প্যাডের সুবিধা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা। সরকারি উদ্যোগেই দেশের ছ’হাজার জনৌষধি কেন্দ্র থেকে এক টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পেয়েছেন পাঁচ কোটি মহিলা। জিএসটির আওতা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও আমাদের দেশে পিরিয়ড প্রোডাক্ট বিনামূল্যে পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। জনৌষধি কেন্দ্রগুলি ছাড়া স্যানিটারি প্যাড বেশি দামেই কিনতে হয় মেয়েদের। এ দেশে স্যানিটারি ন্যাপকিন কবে বিনামূল্যে দেওয়া হবে এখন সেটাই দেখার।