
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এমন ভয়ঙ্কর প্রভাব বোধহয় আগে দেখা যায়নি। উন্মত্ত বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে, পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে। ধাক্কাধাক্কি চলছে চরম। মুখে স্লোগান, ট্রাম্পকে কিছুতেই হারতে দেওয়া যাবে না। বিল্ডিং চত্বর কার্যত রণক্ষেত্র। বিপুল ভোটে এগিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনই। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে আজই বাইডেনকে জয়ের শংসাপত্র দেওয়া হবে। অন্যদিকে, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা বিপুল ভোটে নাকচ করে দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ভেটোকে। গদিদে তাঁর মেয়াদ আর কিছুদিনের। এই ধাক্কাই মানতে পারেননি ট্রাম্প সমর্থকরা।
প্রেসিডেন্টের গদিতে বাইডেন বসার আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন ডিসি। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে হামলাকারীদের। গুলি চলছে। রক্তাক্ত বিল্ডিং চত্বর। চার বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মৃতদের মধ্যে একজন মহিলা। মেট্রোপলিটন পুলিশ চিফ রবার্ট ডে কন্টি বলেছেন, হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে বিক্ষোভাকারীদের বের করা দেওয়া হয়েছে। প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছে বিল্ডিং খালি করতে। গোটা চত্বর ঘিরে রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।

সেনেট মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা চলছে। তবে এখন যা হচ্ছে তাকে গণতন্ত্রের অবমাননাই বলা যায়। ম্যাককনেল ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্পকে অনেক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন। তবে এই ঘটনায় তাঁর সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে বলেই দাবি ম্যাককনেলের। বলেছেন, এদের থামানো না গেলে আমেরিকান রিপাবলিককেই বদনাম করে ছাড়বে।
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সেনেট ডেমোক্রেটিক লিডার চাক স্কুমার। তিনি বলেছেন, সবটাই ট্রাম্পের প্ররোচনায় হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার পথে নেমেছে উগ্র মনোভাবাপন্ন একদল বিক্ষোভকারী।
গণতন্ত্রের লজ্জা, বলেছেন ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর কথায়, এমন ছবি আমেরিকার হতে পারে না। আমেরিকাবাসীর লক্ষ্য গণতন্ত্রকে সুপ্রিতিষ্ঠিত করা। কিছু প্ররোচিত মানুষজন তাকেই নষ্ট করার কাজে নেমেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০ টি ভোট প্রয়োজন হয়। বাইডেন পেয়েছেন ইলেকটোরাল কলেজের ৩০৬ টি ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২ টি। তাছাড়া ট্রাম্পের থেকে ৫৩ লক্ষের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্প এই জয় মেনে নিতে পারেননি। তিনি পষ্টাপষ্টি অভিযোগ করেছিলেন ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট রিগড ইলেকশন’ , অর্থাৎ নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে। যদিও তার পক্ষে তিনি কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকটি মামলা করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি ইতিমধ্যে নাকচ করে দিয়েছেন বিচারকরা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হইহই কিছু কম হয়নি। ট্রাম্পের গদি নড়িয়ে দিয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবির। বিপুল ভোটে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের এতদিনের হম্বিতম্বিতেও কাজ হয়নি। একের পর এক রাজ্যের ভোট হাতছাড়া হওয়ায় এমনিতেই বেজায় চটেছিলেন ট্রাম্প। একেবারে ভোট দুর্নীতির অভিযোগ চাপিয়ে দিয়েছিলেন বাইডেনের ওপরে। তবেও তাতেও চিড়ে না ভেজায়, ফোন করে বিপুল ভোট পাইয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। জর্জিয়ার রিপাবলিকান সেক্রেটারি ব্র্যাড র্যাফেনস্পার্জারের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রায় এক ঘণ্টার কথোপকথন ফাঁস হয়ে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে রিপাবলিকান শিবির। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ধমক ধামকে কাজ না হওয়ায়, এখন গায়ের জোর দেখাতে শুরু করেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা।