
অক্সফোর্ড টিকার বেশি ডোজ নাকি কম কার্যকরী, ধন্দে বিজ্ঞানীমহল, জবাব দিলেন সারা
আমেরিকার দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মোডার্না এবং ফাইজার তাদের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের রিপোর্টে স্পষ্টই বলেছে টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে শুধু অক্সফোর্ডে-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ট্রায়ালের রিপোর্ট নিয়েই।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কত শতাংশ কার্যকরী অক্সফোর্ডের টিকা? ৭০ শতাংশ নাকি ৯০ শতাংশ? দু’রকম ট্রায়াল রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
আমেরিকার দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মোডার্না এবং ফাইজার তাদের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের রিপোর্টে স্পষ্টই বলেছে টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে শুধু অক্সফোর্ডে-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ট্রায়ালের রিপোর্ট নিয়েই। আসলে অক্সফোর্ডের টিকায় বহুদিন থেকেই ভরসা রেখেছে বিশ্ববাসী। তাই টিকা কতটা কার্যকরী হচ্ছে সে নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
টিকার ডোজ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এমনও শোনা যাচ্ছে, অক্সফোর্ড টিকার একটি ডোজ দিলে নাকি তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে। অথচ যদি টিকার সম্পূর্ণ ডোজ অর্থাৎ ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবকদের তাহলে নাকি টিকার কার্যকারিতা ফের ৭০ শতাংশে নেমে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে বা কীভাবেই হচ্ছে, সে নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে ব্রিটেনের ভ্যাকসিন রেগুলেটরি কমিটিও।
অক্সফোর্ড টিকার বেশি ডোজ কম কার্যকরী হচ্ছে কেন?
সারা গিলবার্ট, অ্যান্ড্রু পোলার্ডের টিম অবশ্য এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য এখনও দিতে পারেনি। তবে টিকার মুখ্য গবেষক সারা গিলবার্ট কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বলেছেন।
সারা বলেছেন, অক্সফোর্ডের ডিএনএ ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কার্যকরী হয়েছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই। প্রথম দুই পর্বের ট্রায়ালের রেজাল্টে দেখা গিয়েছিল ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই টিকার ডোজে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে সে রিপোর্ট সবিস্তারে সামনে এনেছিল সারার টিম। তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
ব্রিটেন ছাড়াও বিশ্বের কয়েকটি দেশে অক্সফোর্ড টিকার বৃহত্তর ট্রায়াল হয়েছে তৃতীয় পর্বে। তার সবটা তথ্য এখনও সামনে আসেনি বলেই জানিয়েছেন সারা গিরবার্ট। তাঁর কথায়, ব্রিটেন ও ব্রাজিলে ১৩১ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর টিকার ডোজের প্রভাব সামনে এনে জানানো হয়েছিল ৭০ শতাংশ কার্যকরি। এরপরে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছিলেন, টিকার ডোজে কাজ হচ্ছে আরও বেশি, দেখা গেছে টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী। এরপরেই খবর ছড়ায়, টিকার একটা ডোজই ৯০% কার্যকরী হচ্ছে, বেশি ডোজ দিলে এর প্রভাব কমে যাচ্ছে।
অক্সফোর্ডের টিকা হল ভেক্টর ভ্যাকসিন। শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া সর্দি-কাশির ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি হয়েছে। ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজিতে চ্যাডক্স তথা ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকলে করোনার স্পাইক প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। মেমরি বি-কোষকে সক্রিয় করে অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে পারে। সারা বলছেন, এমন হতে পারে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজে অ্যাডেনোভাইরাস যখন শরীরে ঢুকছে তার প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এক ধাক্কায় বি-কোষ ও টি-কোষ জেগে উঠে ইমিউন পাওয়ার বাড়িয়ে তুলছে। তাই দেখা যাচ্ছে, টিকা বেশিমাত্রায় কার্যকরী হচ্ছে। ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয়েই থাকছে শরীরে।
এবার যখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে তখন শরীরের কোষে আর নতুন করে কোনও সাড়া জাগছে না। অর্থাৎ প্রথম ডোজের পরেই শরীরের ইমিউন কোষগুলো ভাইরাসকে চিনেই রাখছে এবং তার প্রতিরোধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে ফেলছে। দ্বিতীয়বার যদি বেশি ডোজ দেওয়া হয় তাহলে তার প্রভাব চাপা পড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘টলারেন্স’ বা ‘ইমিউন ডিসেন্সিটাইজেশন’ । তবে এগুলো সবই সম্ভাব্য কারণ। তৃতীয় পর্বে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে টিকার ডোজের প্রভাব সামনে আসার পরেই সঠিক তথ্য দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সারা গিলবার্ট।